মেঘেদের রাজ্যে — কোয়েলী ঘোষ
মেঘেদের রাজ্যে
কোয়েলী ঘোষ
“মেঘ বলল যাবি? অনেক দূরের গেরুয়া নদী।
অনেক দুরের একলা পাহাড়, অনেক দূরের গহন সে বন।
গেলেই দেখতে পাবি। যাবি?
জানলা দিয়ে মুখ ঢুকিয়ে বলল সে মেঘ-
যাবি? আমার সঙ্গে যাবি? …”
মেঘ ,পাহাড় আর ঝর্ণার আমন্ত্রণে যাচ্ছি সেই রাজ্য যেখানে সবুজ ঢেউ খেলানো পাহাড় ,উড়ে যায় সাদা মেঘ , সারি সারি পাইন বন , নেমে এসেছে ঝর্ণা ।
দুদিকে ডানা মেলে উড়েছে প্লেন । মেঘের দেশে সেই মেঘালয় , কেউ বলে পাহাড়ের বাড়ি , কেউ বলে প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড ।
মধ্যবিত্ত বাঙালির আকাশপথে ভ্রমণ সম্ভব হয়েছিল কারণ দেওর বলেছিল এখন টিকিটের দাম কম । তার ব্যবস্থাপনায় আমরা দুই মেয়েকে নিয়ে দমদম বিমান বন্দর থেকে পাড়ি দিলাম মেঘালয়ের রাজধানী শিলং পাহাড়ের উদ্দেশ্যে ।
মেঘালয় উত্তরপূর্ব ভারতের এক রাজ্য । উত্তর আর পূর্ব দিকে আসাম আর দক্ষিণ আর পশ্চিম দিকে বাংলাদেশ ।
১৯৭০ সালে আসাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সৃষ্টি হয় মেঘালয়ের । গারো পাহাড় , খাসি আর জয়ন্তীয়া এই তিন পাহাড় নিয়ে গড়ে উঠেছে এই ছোট্ট পাহাড়ি রাজ্য । ১৪৯৬ মিটার উচ্চতায় এই শিলং শহর ।সারা ভারতের এবং বিদেশের পর্যটকরাও এখানে বেড়াতে আসেন ।
গৌহাটি বিমানবন্দর থেকে ভাড়া গাড়ি করে চলেছি শিলং পাহাড়ের দিকে , দূরত্ব ১০৩ কিলোমিটার । তিন থেকে চার ঘণ্টার পথ ।
পথে যেতে যেতে দেখা হলো উমিয়াম লেকের সাথে । কেউ বলে বড়া পানি ।
চারিদিকে সবুজ ছোট ছোট টিলা ঘিরে আছে লেকের নীল জল । এখানে বোটিং করা যায় । সূর্যাস্তের রঙে বর্ণিল সাজে সেজে ওঠে লেক । কিছুক্ষণ এখানে থেমে গাড়ি আবার চলতে শুরু করল । আমরা পৌঁছে গেলাম হোটেলে ।
স্নান খাওয়া সেরে সেদিন শিলং শহরের আশেপাশে ঘুরলাম । রেস্তোরাঁ , হোটেল , শপিং মল সবই আছে এখানে ।
পরের দিন সকালে আমরা গাড়ি ভাড়া করে আশেপাশে দেখতে বের হলাম ।
ক্যাথেড্রাল ক্যাথলিক চার্চ শিলংয়ের বিখ্যাত বৃহত্তম চার্চ । চার্চের ভিতরে ঘুরে দেখলাম ।
ওয়ার্ডস লেক – নীল স্বচ্ছ জলে ফুটে আছে লাল শালুক ফুল । জলে ভাসছে ছোট ছোট রঙিন বোট । চারিদিকে বিস্তীর্ণ সবুজ উদ্যানে ঘেরা এই সরোবর । তার ওপর পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে ।
এবার আমরা শিলং পাহাড়ের দশ কিলোমিটার দূরে শিলং পিক গেলাম । এখান থেকে শিলং শহর পুরোটা ছবির মত দেখা যায় । ওপরে মেঘলা আকাশ ঘেরা সবুজ পাহাড়ের নিচে ছোট ছোট ঘরবাড়ি । কিছুক্ষণ বসে আবার গাড়ি চলতে শুরু করল ।
মাত্র বারো কিলোমিটার দূরে এলিফ্যান্টl ফলস । সিঁড়ি দিয়ে নেমে দেখলাম কালো পাথরের গা বেয়ে ধাপে ধাপে নেমে আসছে দুধ সাদা ঝর্ণার জল । এত কাছে থেকে ঝর্ণাধারা দেখে আমরা মুগ্ধ হলাম ।
পাইন আর রডোডেনড্রন ফুলে বেষ্টিত গলফ কোর্সটি এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম । সবুজ বাগিচার মত এই গলফ কোর্স দেখলে দু চোখ ভরে যায় ।
সারি সারি পাইন বনে শোনা যায় পাখির কলতান ।
ডনবসকো মিউজিয়ামে বিভিন্ন উপজাতির সংস্কৃতি পোশাক , বাসন পত্র , মুখোশ , অস্ত্র ইত্যাদি সংরক্ষিত আছে ।
লেডি হায়ডারি পার্ক – জাপানি স্টাইলের বাগানের আকারে নির্মিত এই পার্কে পুকুর , হ্রদ , অর্কিড , বাহারী পাতা দিয়ে সুন্দর সাজানো ।
দেখা হল সবুজ চা বাগান ।
শিলং পাহাড়ে এসেছিলেন রবি ঠাকুর । দুমাস ছিলেন । এখানেই তিনি লিখেছিলেন শেষের কবিতা । রবিঠাকুরের সেই বাড়ি বাইরে থেকে দেখতে দেওয়া হয় । বাড়ির সামনে তাঁর মূর্তি আছে ।
এখানে মোমো এক উপাদেয় খাবার ।
বিক্রি হচ্ছে বাঁশ বেতের জিনিস , মণিপুরী চাদর । দু একটা বাঁশের জিনিস কিনে হোটেলে খাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়লাম তাড়াতাড়ি ।
পরের দিন যাত্রা করব বৃষ্টির শহর চেরাপুঞ্জি ।
ফটোগ্রাফার — অর্পণ ঝা
———–