সাতকোশিয়া সাতমহলে পঞ্চম এবং শেষ পর্ব
সাতকোশিয়া সাতমহলে
পঞ্চম এবং শেষ পর্ব
ভোর ভোর উঠে বেরিয়ে পড়েছি পাঁচজনেই। ঘন্টা তিনেক পরেই গাড়ি এসে যাবে আমাদের। তার আগে যতটা সম্ভব দুচোখ ভরে দেখে নিই ভোরের কুয়াশা মাখা মহানদীর সৌন্দর্য। উপর থেকে নেমে নীচে, আরও নীচে। তারপর বালির উপর দিয়ে হেঁটে চলেছি মহানদী কে হাত দিয়ে ছোঁব বলে। পা ডুবিয়ে জল ছিটিয়ে যতটা ভেজা যায়। বালির চর মনে হচ্ছে যেন রাজস্থানের খুড়ি বা শাম। হাঁটছি তো হাঁটছি। পা ডুবে যাচ্ছে বালিতে। কুয়াশার জামা খুলে নতুন পেলব রোদ মাখছে মহানদী। অদ্ভুত সুন্দর চিকচিক করছে জল। দূরের পাহাড় দৃশ্যমান। আমরা পাঁচজন ছাড়া আর কেউ নেই। তবে অনেকে যে আসে তার প্রমাণ পেলাম অনেক কিছুর মোড়ক আর খালি বোতল দেখে। কেউ স্নান করতে চাইলে এখানেই করে তাই ছোট ছোট চেঞ্জিং রুম আছে। আমরা সূর্যের দিকে মুখ করে হাঁটা শুরু করি নদীর পাড় ধরে। তুমুল হাওয়া আর রোদের মেলবন্ধনে সে এক অপরূপ সুন্দর পরিবেশ। মুখ তুলে দেখলে একটু দূরে পাহাড়ের উপর আমাদের কটেজ। সব ছেড়ে চলে যেতে হবে আজ।
মন খারাপের মধ্যেও কিছু ছবি নিয়ে এলাম খাবার জায়গায়। তিনদিনের পরিচয় কতটা কাছের হয়ে গেছিলাম বুঝলাম যখন ওরা বারবার বলছিল যেন আবার এখানে আসি। অগাস্ট মাসের বৃষ্টি তে এখানটা জলে ভরে যায়। তখন খাবার জায়গা ঐ উপরে আমাদের থাকার জায়গার একটু নীচে।
মহানদীর সেই মহারূপ দেখার আমন্ত্রণ জানাল ওরা। কথা দিলাম আসব আবার। এরপর ওদের স্যুভেনির শপে গিয়ে কিছু জিনিস কিনলাম। এক মহিলা কর্মীর ছেলে ওখানে কাজ করে। নিজের ভাষায় তার দুঃখের কথা শোনাল। বর মারা যেতে দুটো ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টের দিন গেছে।
এখানে রান্না পরিবেশন ধোয়া মোছার কাজ পেয়ে একটু টাকা জমিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছে। ছেলেকে পড়াশোনা শিখিয়ে এখানেই কাজে ঢুকিয়ে এখন কিছুটা ভাল আছে। চলে যাচ্ছি শুনে আঁচলে চোখ মুছল। পম্পা কিছু টাকা দিল। বারবার বললো যেন আবার আসি ঘুরতে। গাড়ি এসে গেছে। কটেজ থেকে লাগেজ নামিয়ে আনল একটি ছেলে। সব গাড়িতে তুলে চলে আসছি যখন, আত্মীয় বিদায়ের শোক নিয়ে ওরা বিদায় জানাল। পাহাড় জঙ্গলের বুক চেরা রাস্তায় ছুটে চললো আমাদের গাড়ি ভুবনেশ্বরের পথে…..