ডলফিন ড্যান্স
আমি দ্রাঘিমায় মাপিনা পৃথ্বী
আমি দৃষ্টি সুখের ঘোরে
বিস্ময়ের ঘোরে পা ফেলছি
পরদেশের খোলা ঘরে।
আজ দুপুর -দুপুর বেরানোর কথা থাকলেও বৃষ্টি এসে থামিয়ে দিয়েছিল যাত্রা পথ।
মনের ভিতর ভাবনার ঘূর্ণিতে একটা কথাই শুধু মনে
হচ্ছিল যা দেখলাম, তা-কী দেখাতে পারলাম!!
অবিশ্বাস্য রকম সুন্দরী এই জাপান সুন্দরী —
কোন দিক দিয়ে শুরু করে কোন দিকে নিয়ে যাবো বোঝার আগেই আবার এক সুন্দরের আবির্ভাব।
আজ চলেছি #ডলফিন শো দেখতে—
#ম্যাক্সেল আ্যকোয়া পার্ক শিনাগাওয়া তে…
যথারীতি শিনাগাওয়া স্টেশনে নেমে হাঁটা শুরু..
রিমঝিম বৃষ্টির নুপুরের তালে একযোগে কত্থকের বোলে মনমোহিনী রূপে সে আমার হাত-ধরাধরি করে এগিয়ে নিয়ে চলছে..
আনাড়ি আমি কখন পা পিছলিয়ে পড়ি, আর তার
দেশের বদনাম দেশবাসি যেমন চায়না, প্রকৃতিও
না।সে অতি সন্তর্পণে আমাকে এগিয়ে নিয়ে চলছে
তার চলার ছন্দের সুরে–
“আমি যার নুপুরের ছন্দ বেণুকার সুর কে সে সুন্দর কে এ এ…এ .কে সে সুন্দর কে?”
আমি বলি তুমিই বলো, সে বলে না তুমি।
এই তুমি, তুমি করতে জানা হয়ে গেলে সেইই সুন্দরী
মোহময়ী অপরূপ রূপকথার রানী।
জীবনে যদি চাইতেই থাকি তাহলে মনে হয় মনের ভাঁড়ার কোনদিন পূর্ণ হবেনা —
অযাচিত ভালোবাসা যখন এসে হাতধরে তখন মনে হয় সঁপে দি নিজেকে, প্রকৃতির পাগলপ্রেমিক আমি,
তাই প্রকৃতির দুষ্টুমি কে প্রশংসার প্রশয়ে জড়িয়ে নিয়ে পৌছলাম #ম্যাক্সেল আ্যকোয়া পার্ক ★
অবাক-খুশির মুগ্ধতা মেখে ——
আমরা সন্ধ্যার দিকে অ্যাকোরিয়ামে পৌঁছালাম, এক একজনের টিকিটের দাম ২২০০ ইয়েন। বৃষ্টির কারণে আমাদের একটু দেরি, তাই সী-লায়নের সো আমরা দেখতে পাইনি। ঢোকার মুখে কিছু রাইড ছিল, ছিল বাচ্চাদের ক্যারোসেল।
কিন্তু সেই গুলো দাঁড়িয়ে দেখার সময় হয়নি, কারণ আসল খোঁজ #ডলফিন শো
তবে আমরা অনেক সামুদ্রিক প্রাণীর প্রদর্শনী দেখে অবাক ও মুগ্ধ হয়েছিলাম।
মন্টা রে, স্ট্রিং রে, ( একপ্রকার বিশাল মাছ, স্ট্রিং রে গুলির লেজে কাঁটাতারের স্ট্রিং থাকে, শিকার ধরার জন্য স্ট্রিংগিং ক্ষমতা তাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
#মন্টা রে, এই মাছগুলো বিশাল আকারের,প্রায় ৭মিটার প্রস্থ সমেত বিশাল রশ্মি, এদের বডি ওয়েট
১৩৫০ কিলোগ্রামের মতন।ত্রিভুজ আকৃতির বিশিষ্ট
এই মাছগুলোর নিচের চোয়ালে ১৮ সারি দাঁত থাকে।
অন্যান্য বড় মাছের সাথে চলার জন্য একটি বিশাল লম্বা টানেল ছিল, সেই টানেল পথে চলতে চলতে মনে হচ্ছিল স্কুবা ডাইভিং করছি…
কিছু বড় হাঙ্গর , কিছু পেঙ্গুইনস, ওটারস অ্যামাজন অঞ্চল থেকে একটি বিশাল প্রদর্শনী। শার্ক, তিমি, সিল, কত প্রজাতির সমুদ্র জীব…।
মুগ্ধতা ও অবাক বিস্ময়ের খুশির আলো, নীল মোহময়ী আলোর সঙ্গে হৃদয় দেওয়া-নেওয়া করে
আমরা এগিয়ে চলেছি গভীর আলিঙ্গনের হাত ধরে—
বিশাল বিশাল আ্যকুরিয়াম , অ্যাকুরিয়াম গুলো এতটাই স্বচ্ছ সমুদ্র প্রাণীগুলিকে মনে হচ্ছিল ছুঁতে পারবো।
দেখেই বোঝা যাচ্ছিল সব সমুদ্র প্রাণীগুলো খুবই স্বাচ্ছন্দ্যে আনন্দে সেই আ্যকুরিয়াম মধ্যে ঘোরাফেরা করছে এত বড়ো জলাধার…
তাদের বিচরণে কোন ব্যাঘাত ঘটেনা,
সমুদ্র প্রাণীগুলোর স্বাস্থ্যের অবস্থা যথেষ্টই ভালো।
দেখেই বোঝা যায় এদের খুব যত্নে -আদরে রাখা হয়।আমরা একটা ট্যানেল দিয়ে চলেছি সেই ডুবো জলের টানেল যা দিয়ে সমস্ত ধরণের সমুদ্রের প্রাণী আমরা দেখতে দেখতে চলছিলাম।
এলাম জেলিফিশের ঘরে, ঘরটা খুবই ঠাণ্ডা, স্বচ্ছ আ্যকুরিয়াম, নানান রঙের ভেল্কি, আর জেলিফিশের নাচ, অসম্ভব সুন্দর, এ ওর পিছে তো ও এর পিছু নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে জলাধারে।
প্রধান শো #ডলফিন ড্যান্স।
চারপাশে দর্শকদের গ্যালারি কানায় কানায় ভরে গেছে। মাঝখানে সুইমিং পুল, সবাই সাগ্রহে তাকিয়ে আছে সুইমিং পুলের দিকে
দুটো ছোট ডলফিন ঘুরে ঘুরে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছিল। যেন বলতে চাইছিল বসো বাছারা—
একটু ধৈর্যের পরীক্ষা দাও, আমাদের বাবা কাকারা
আসছে তোমাদের খেলা দেখিয়ে আনন্দ দিতে।
#ডলফিনশো, যে পুলের ভিতর ডলফিনরা খেলা দেখায় তা’কে বলে # ডলফিনেরিয়াম অর্থাৎ ডলফিনদের খেলা দেখানোর জন্য উপযোগী অ্যাকুরিয়াম।
#ডলফিনেরিয়ামে ডলফিনরা যা’তে সুস্থ এবং স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে থাকতে পারে, তারজন্য কিছু নির্দেশনামা মেনে চলতে হয়।
পুলের জলকে ফিল্টারিং করা, জলের তাপমাত্রা আর চাপ সমুদ্রের জলের মতন করে রাখতে হবে।
যা’তে তাদের থাকতে অসুবিধা না হয়।তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে সাথে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন না হয়।
পুলের সাইজ নিয়ে নানান দেশে নানান মত। তবে
মোটামুটি ৮১০ বর্গফুট প্রয়োজন।
এই মরেছে…
মনে করে দেবেন তো; নিয়ে যাচ্ছিলাম #ডলফিন শো
দেখাতে… আর মাঝ রাস্তায় থামিয়ে বক্তিমে,
এ আমার ভারি অন্যায়।
আসলে বাঙালি স্বভাব, জ্ঞান দেবার সূযোগ পেলে
যথাস্থান, অকুস্থান, কিছুই মনে থাকেনা —
এই… এই এসে গেছি,
তারপর —-
হঠাৎ করে গ্যালারির সমস্ত আলো নিভে গিয়ে জ্বলে উঠলো সুইমিং পুলের অতি রশ্মির নানান রঙের আলো,যার বর্ণচ্ছটায় সুইমিং পুল কে গান্ধর্বের কোন
মায়াবী জলাশয় মনে হচ্ছিল —
সেই মায়াবী আলোর রং মেখে বেড়িয়ে এলো
সুন্দরী সব অপ্সরারা —–
যাঁরা এই ডলফিনদের প্রশিক্ষকও বটে।
আলোর কারিকুরি তে সে এক মায়া- ছায়া জগৎ,
কিছুটা হলেও হতভম্ব হয়ে গেয়েছিলাম। স্বপ্নপুরীর
পালঙ্ক থেকে চমক ভাঙা ঘুমে বাস্তবে ফিরলাম
যখন শুনতে পেলাম—
প্রশিক্ষকদের নির্দেশ, তাঁরা কিছু বললেন ডলফিনদের ( বাধ্য ছাত্রছাত্রীদের ) যেহেতু জাপানি ভাষায় তাই কিছু বুঝলাম না।
কিন্তু দেখলাম ডলফিন গুলো গোল গোল ঘুরতে লাগলো, তারপর এ ওর পিছে পিছে চলতে শুরু করলো…
পুলের চারদিকে সুন্দরী জাপানি ললনারা আবার কিছু নির্দেশ দিতেই পুলের মাঝ থেকে হটাৎ করে একসাথে লাফিয়ে উঠলো ৩-৪টি ডলফিন।
অনেকটা লক গেটের জল ছাড়ার মতন এক একবার খুলে দিচ্ছে দরজা আর সেখান থেকে একে একে বেড়িয়ে আসছে #ডলফিন।
প্রশিক্ষিত ডলফিনগুলো একসাথে নানা রকম কলা-কৌশল দেখাতে লাগলো। একসাথে ধনুকের
বেঁকে , ডিগবাজি খেয়ে অতিথিদের মনরঞ্জনে ব্যস্ত হয়ে উঠলো। সবচেয়ে যেটা খুবই আশ্চর্যজনক লেগেছিল সেটা হ’লো একটা বিশাল রিং উপর থেকে ঝুলছে, আর সেই রিং থেকে রং বেরঙের বৃষ্টির ধারা নেমে আসছে পুলের জলে…
এক মায়াবী আলোর জলাশয়, মনে হচ্ছিল নিশ্চয়ই রাক্ষসীর প্রাণভোমরা নিতে নেমে আসছে ওই যে…
ওই যে সুন্দরী রাজকন্যা।
হ্যাঁ, সেই বৃষ্টির ভিতর থেকে একজন রাজকন্যা (প্রশিক্ষক) বেড়িয়ে এলেন, সাথে একটা ডলফিন।
প্রশিক্ষকের মুখে একটা লম্বা হুইসেল যার দুইপাশেই রিং লাগানো, রিঙের একটা অংশ প্রশিক্ষকের মুখে আর একটা ডলফিনের, দু’জনেই একসাথে সুইমিং পুলে ঘুরে ঘুরে নাচ করতে করতে লাগলো, নাচতে নাচতে চলে সেই ঝর্ণার মুখে, তারপর ঘুরতে ঘুরতে সেই রাজকন্যাকে প্রায়১০ ফুট উচ্চতায় তুলে নিয়ে গেল ডলফিনটা।
আবার গোল -গোল ঘুরতে ঘুরতে নেমে এলো।
সারা গ্যালারি জুড়ে গ্যালাক্সির ঘূর্ণন…
সে যেন এক স্বপ্নলোক! কল্পনার উন্মাদনায় নয়! বাস্তবের ছোঁয়ায় বাস্তবতা।
এই ডলফিনটা অন্য ডলফিনের তুলনায় বেশ বড়ই ছিল।এক অবাক করা বিস্ময়ে আমরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম,
আমার বয়স যেন ১০বছর হয়ে গেয়েছিল, আনন্দে হাততালি দিতে ইচ্ছে করছিল তবুও ইচ্ছেকে দমিয়ে রেখে খেলা দেখার দিকে মন দিলাম।
####
ডলফিন খুব কাছের বন্ধু মানুষের,
ডলফিনদের সাথে মানুষের পরিচিতি বহু বছরের।
Bottlenose Dolphin সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় এই শো গুলো করার জন্য।
ডলফিন খুবই বুদ্ধিমান প্রাণী, তাই এদের সহজেই প্রশিক্ষিত করা যায়। আর এরা চরিত্রের দিক থেকে এরা খুবই শান্ত।
ডলফিন শো শেষে বেড়িয়ে এলাম, এক মায়াবী আলোর পথ ধরে, সে যেন এক অন্যজগত যার সঙ্গে বাস্তবের কোন মিল নেই।
একটা বিষয়ে অবাক হলাম অনেকই বাচ্চাদের নিয়ে
গেছেন, কিন্তু তারাও কেমন চুপচাপ, বাচ্চাদের খেলার জিনিস বিক্রি হচ্ছে, খাবার বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু তাদের বায়না বা আবদার কোনটাই চোখে পড়লোনা।
ভাবলাম জাপানিদের কী শৈশব বা কৈশোর হয়না!!
এরা কী জন্ম অভিভাবক!!