কবিতা –“আমি ঈশ্বর তুমি জননী ” কলমে ঃ–শিল্পী দাস।
কবিতা –“আমি ঈশ্বর তুমি জননী “
কলমে ঃ–শিল্পী দাস।
তুমি???.
আমি নারী
প্রভু–তোমাকে সৃষ্টির জন্য পাঠানো হয়েছিল?
নারী–কিন্তু আমি পারিনি, ব্যর্থ হয়েছি।
পৃথিবীতে গিয়ে আমি অস্তিত্বের মুক্তি চাইলাম।
প্রভু–কিন্তু কেন ???
নারী—প্রজ্বলিত দীপের অমল আলোয়, আমি
নন্দিনী নদী হয়ে বয়ে যেতে চেয়েছিলাম,
চেয়েছিলাম জোয়ারে দুকূল ভাসিয়ে পৃথিবীর মানুষের আকন্ঠ তৃষ্ণা মেটাতে।
প্রবেশ আর প্রস্থানের নিভৃত অন্তরালে বেহাগ বুকের কাছে, সকলকে টেনে নিয়ে অকুণ্ঠিত প্রেম দিতে।
বিশ্বাস করুন প্রভু….
আমি কিঞ্চিৎ সুখ ও তাদের কাছে আশা করিনি।
প্রভু—তবে কি এমন ঘটলো, যে তুমি দ্বায়িত্ব থেকে সরে এলে???
তুমি তোমার কর্মে অধিকতর মনোযোগী ছিলে না????
নারী তুমি, ধরনীর প্রাণ তুমি,
তুমি কৃষ্ণ মেঘমালা, তুমি বজ্রের বুকে অগ্নি,
তুমি চন্ডালীকা, সেই তুমি কুঁড়ির বুকে লুকিয়ে থাকা কোমল শতরুপা।
সব দিয়েছি তোমায় সব, সব, সব তবুও ব্যার্থ???
কোনো ক্ষমা নেই অগ্ন্যাধানই তোমার প্রাপ্য….
নারী—–যথার্থ বলেছেন আপনি প্রভু…
সব দিয়েছেন আমায় কিন্তু প্রভু.. সত্যি কি সব আমার একান্ত নিজের জন্য ছিলো???
আপনিও পুরুষ….
তাই মহানন্দার বহতা স্রোত দিয়েছেন,যে তরঙ্গে ভেসে পুরুষ নিভিয়েছে কামনার আগুন।
দিয়েছেন সূর্যমুখির সৌন্দর্য কিন্তু সূর্যের করুনার দানে তার বেঁচে থাকা।
দিয়েছেন কুমারিত্বের গায়ে চন্দ্র গ্রহণের স্নিগ্ধ ছোঁয়ায় বেড়ে ওঠা পুরুষতান্ত্রিকের দ্বিচারিতা।
সব দিয়েছেন আমায় কিন্তু কোনো কিছুই আমার ছিলো কি????
হে প্রভু আপনার হৃদয় প্রদীপের প্রজ্জ্বলিত শিখায় আমি আলোকিত হয়নি,
সে শিখা আমি অঙ্গে মেখে দহিত হয়েছি বারবার।
পুরুষ কি সৌন্দর্যকে দৃষ্টি নন্দনে শুধু রাখে?
সে নারীর সৌন্দর্যের কাছে নিজের বাসনা পূর্ণের আশা রাখে।
তিল তিল করে কামনা বাসনা কে লালন করে অন্তরে।
হে প্রভু আপনি তো পুরুষ…..
তাই নারী হৃদয়ে বয়ে চলা স্নিগ্ধ স্বর্ণগঙ্গাতে, ছদ্মবেশে ডুব দেওয়া পুরুষ,
তারাও আপনার পাঁজরের তলায় স্থান পায়।
আর আমি নারী তাই শুধু সৃষ্টিই আমার ধর্ম?
মৃত্যু উপত্যকায় দাঁড়িয়ে নিস্তব্ধতায় সহে যাওয়া আমার কর্তব্য????
ধরনীর প্রতিটা প্রাণ আমার ঔরসে বেড়ে ওঠে..
আপনার এতো দানে যে নারী গরীয়সী
তবে কেন তার শুধু সয়ে যাওয়া????
তার করুণ নিঃশ্বাসের শব্দে পৃথিবী কাঁদছে দেখুন ।
হে প্রভু আপনারা পুরুষ, শুধু উপভোগ করেন
তার শরীর,মন,ভাললাগা,ভালোবাসা সব কিছু…
আমি আজ ব্যর্থ, পারিনি….
পারিনি অন্তঃসলিলা নদী হয়ে বয়ে যেতে, পারিনি শৈল্পিক কারুকাজে সৃষ্টিকে সাজাতে।
তাই ব্যর্থতা নিয়ে ফিরে এসেছি..
প্রভু আপনি বিচারক..
তাই প্রাপ্তিতে সুখের রেশ নাইবা পেলাম,
তবুও পৃথিবীর জননী বলে, উপহার স্বরূপ যে, “নারী জন্ম” আমার স্বর্ণ খচিত মুকুট হয়ে মস্তকে জ্বল জ্বল করছে??
তাতেই আমি প্রাণিত হলেম …
প্রভু–নারী তুমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার
যে পুরুষ তোমায় করেনি সমাদর।
জেনে রেখো তার ধ্বংস অনিবার
আমি ঈশ্বর,
৷ আর তুমি জগত মাতা ধরনীর পর।