সাতকোশিয়ার সাতমহলে — চতুর্থ পর্ব — তুলি মুখার্জি চক্রবর্তী
সাতকোশিয়ার সাতমহলে
চতুর্থ পর্ব
তুলি মুখার্জি চক্রবর্তী
আজ শেষ দিন এখানে। ঘুম ভাঙতেই ছুটে বাইরে এসে দেখি তাকিয়ে মহানদীর চর আর ছোট বড় পাহাড়ের সারি। এক দিকের পাহাড়ের একদম উপরে আমাদের কটেজ তাই বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপরূপ দৃশ্য দেখা। কটেজ বারান্দা ঘিরে আছে জানা অজানা গাছ। হালকা শীত আর কুয়াশা মোড়া সকাল দেখে মন যতটা খুশি আর কাল ভোর দেখেই চলে যেতে হবে এই জায়গা ছেড়ে ভেবে ততটাই দুখী। ঘরে একপ্রস্থ চা খেয়ে ফ্রেশ হতেই ফোন। নীচে নামতে হবে ব্রেকফাস্ট এর জন্য। কি প্রচন্ড সিনসিয়ার এরা। এরা অর্থাৎ এখানে কাজ করা অশিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিত আদিবাসী মানুষ গুলো।
নীচে নেমে জলখাবার আর চা খেয়ে নদীর চরের খাবার ঘর ছেড়ে এলাম উপর উঠে। ক্যানোপির উপর এ মাথা ও মাথা ঘুরে উপর থেকে অনেক দূরের পাহাড় জঙ্গল দেখলাম। অনেকটাই লম্বা আর উঁচু হবার জন্য খুব পরিষ্কার আর ভালো দেখা গেল চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য। চললো ছবি তোলা। যতটা সম্ভব ধরে রাখা যায় ক্যামেরায়।
নেমে দেশি বিদেশি বোর্ডারদের সাথে আলাপচারিতা। দুপুরের খাবার খেয়ে চেনা সেই অটো চড়ে গন্তব্য আবার ফেরিঘাট। আজ কথা বলেই উঠলাম যে একঘন্টা ঘুরবো। আধ ঘণ্টার টাকা দেওয়া আছে প্যাকেজে। বাকিটা দিয়ে দেব কিন্তু অনেক টা দূর পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। আজ অটো চালকও আমাদের সঙ্গে সওয়ার বোটে। দূগ্গা দূগ্গা বলে শুরু হলো দুই উড়িয়া আর পাঁচ বাঙালির ঘন্টাখানেক নৌকা বিহার। আজ আমরা ভীষণ ভালো দেখলাম মহানদীর মহারূপ। দুদিকে পাহাড় মাঝে নদী বহে, কুচকুচে কালো জল। এক দিকের পাহাড়ে যে গাছপালা তাতে আগুন জ্বলছে দেখলাম। সবুজ গাছ গুলো পুড়ছে দেখে ভীষণ খারাপ লাগল। এক জায়গায় গিয়ে বোট ঘুরানো হলো ফেরার জন্য। দুদিন ধরে দেখেও যেন অদেখা রয়ে গেল মনে হচ্ছে তৃতীয় দিনে। এক দিকের পাড়ের অল্প দূর দিয়ে বোট চলছে। বোট চালক দেখাল কুমীর শুয়ে আছে পাড়ে। খুব শান্ত হয়ে। অটো চালক খুব উত্তেজিত ভাবে হাঁউমাঁউ করে স্থানীয় ভাষায় চিৎকার জুড়ল। যত থামতে বলি, আওয়াজ করতে মানা করি, ও ব্যাটা তত চেঁচামেচি করে। কুমীর টা শুনতে পেল মনে হয়। ধীর গতিতে জলে নেমে তলিয়ে গেল। পুরোটাই ভিডিও করলো ববি। নৌকা বিহার, জল ভ্রমণ সার্থক। সেই শুকনো গাছে তিনটে কচ্ছপ, মাছরাঙা পাখি, আগের দিনের মতোই বসে আছে আমাদের জন্য। সবাই কে বিদায় জানিয়ে সূর্য নিজেও চলে গেল তার নিজস্ব পথে। আমরাও ফিরলাম রিসোর্টে। গেটের কাছে ওদের নিজস্ব স্যুভেনির শপ থেকে কিনলাম টুকটাক। এরপর কটেজে ফিরে ফ্রেশ হয়ে অপেক্ষা।
সন্ধে বেলা এল ডাক চা স্ন্যাক্সের। সাথে উপরি পাওয়া নাচ গান নাটকে মনোরঞ্জন। জমজমাট ব্যপার। সব শেষ হলে রাতের খাবার খেয়ে পাহাড়ের উপর কটেজে ক্লান্ত শরীর টেনে ফেরা।
কাল আমাদের গাড়ি আসবে ভুবনেশ্বর থেকে। ঘুম থেকে উঠেই আরেকটু দেখে নেব মহানদীর সোনালী রূপালী রূপ। এই ভেবেই শুয়ে পড়লাম।