” স্বপ্ন নীড়” কলমে—নীরা মিত্র
” স্বপ্ন নীড়”
কলমে—নীরা মিত্র
শহর থেকে কিছুটা বাইরে সবুজের ঘেরা টোপে বেশ কয়েক বিঘা জমিতে এই যে ফার্ম হাউসটা আছে এবার এটা নিয়ে একটা কিছু করতে হবে।
এই ভাবনাটা বিনতার মনে বেশ কিছুদিন থেকে ঘুরপাক খাচ্ছে।
বাবা মা চলে গেছেন তা প্রায় ২০ বছর হয়ে গেছে, মা বাবা চলে যাবার পরেই একা বিনতা আর কলকাতায় থাকতে চাননি, দেরাদুনের একটি রেসিডেন্সিয়াল কলেজের প্রফেসর এবং তার সাথে হস্টেল সুপারিনটেনডেন্ট এর চাকরি নিয়ে আজ থেকে ১৯ বছর আগে কলকাতা ত্যাগ করেন।
দুমাস হলো অবসর নিয়ে কলকাতায় ফিরেছেন তবে কলকাতায় যে জীবনের বাকি দিনগুলি থাকবেন এমন কোন পরিকল্পনা তার নেই, ফিরেছেন এই ফার্ম হাউসটা তে একটা বৃদ্ধাশ্রম করার পরিকল্পনা নিয়ে।
মা যখন রোগ শয্যায় তখন একদিন ওর হাত দুটো ধরে বলেছিলেন, “আমাদের বুড়ো বয়সে তুই তো আমাদের আগলে রেখেছিস কিন্তু কতো বয়স্ক মানুষদের শেষ বয়সে দেখার কেউ থাকেনা, যদি পারিস আমাদের ফার্ম হাউসে একটা বৃদ্ধাশ্রম করিস অসহায় বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের কিছু জনের অন্ততঃ একটা সাহারা হবে…
মার সেই শেষ ইচ্ছা কে আজ বাস্তব করতেই এখানে আসা।
বিনতার নিজেরই এখন ৬৫ বছর বয়স, কিন্তু দেখলে বোঝা যায় না বয়স তার কাছে হার মেনেছে… পড়াশোনায় বরাবরই সামনের সারির, ইউনিভার্সিটির পাঠ চুকিয়ে পি এইচ ডি করে কলকাতারই এক কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন, মা বাবা ভাল উচ্চশিক্ষিত পাত্র দেখে বিয়ে দেন, কিন্তু নাঃ তার কপালে সংসার সুখ ছিল না । স্বামী পুঁথিগত বিদ্যায় শিক্ষিত, কিন্তু আসলে মানুষ টি খুবই দুশ্চরিত্র ওসব রকম বদ গুনের ভান্ডার, তাই সেটা বুঝতে পেরে বিনতা বিয়ের দেড় বছরের মাথায় ডিভোর্স করে মা বাবার কাছে ফিরে আসেন। মা বাবা আবার বিয়ে দিতে চাইলে তিনি আর রাজী হননি। পুরুষ মানুষের প্রতি বিশ্বাস টাই যেন ভেঙে গেছে।
জীবন চলছিল নিজের ছন্দে, আজকাল হঠাৎ হঠাৎ ফেলে আসা দিন গুলো উঁকি দেয়। তেমনি এক দিনের কথা মনে পড়লো সেদিন, ক্লাস এইটে পড়েন তখন বাবার চাকরির স্থল বিহারের এক ছোট মফস্বল শহর। স্কুল থেকে ফিরে পাড়ার সব বাচ্চারা মিলে সামনের মাঠে খেলা হতো, কাবাডি খেলা, ছেলে মেয়ে সব একসাথে। একদিন কাবাডি খেলায় পড়ে গিয়ে হাত পা কেটে একাকার।
হেটে বাড়ি ফেরার মতো অবস্থা নয়, একটি ছেলে কি যেন নাম—হ্যা অন্তু বোধহয়, ও সাইকেল নিয়ে এসেছিল খেলতে ও বিনতাকে সাইকেলে ডাবল রাইড করে বাড়ি পৌঁছে দিল। তারপর থেকে প্রায় রোজই বিনতা আর অন্তু একসংগে ফেরে ও বিনতার থেকে দু ক্লাস সিনিয়র। তারপরে অন্তু হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করে কলকাতায় চলে গেল ডাক্তারি পড়তে। ব্যাস যোগাযোগ ছিন্ন।
বিনতারাও বাবার ট্রান্সফারের জন্য জব্বলপুরে চলে গেল।
এর পরে বিনতার চাকরি, বিয়ে, ডিভোর্স কতো কি ঘটে গেল, মা বাবাও চলে গেলেন, কলকাতা ও আর ভালো লাগে না। তাই বিনতাও কলকাতাকে টাটা করে দেরাদুনে চলে গেল।
আজ এতো বছর পরে কলকাতায় ফিরে ফার্ম হাউসের বাগানে পূর্নিমার চাঁদের আলোয় একা বিয়ার নিয়ে বসে নিজেকে আজ প্রথম বড় একা মনে হলো।
যাই হোক মনের এই দুর্বলতাকে পাত্তা দিতে রাজি নন মোটেই।
সকালে উঠেই বৃদ্ধাশ্রমের নানান কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
সামনের পয়লা বৈশাখে উদ্বোধন। ঐদিন কিছু বোর্ডার আসবেন। তাদের ব্যবস্থা পত্র সব ঠিক করা, তার সাথে নতুন কিছু আবেদন পত্র এসেছে তার থেকে সিলেক্ট করা, বিস্তর কাজদেখতে দেখতে চৈত্র মাসের প্রায় শেষের দিক এসে গেল । আর কদিন পরেই পয়লা বৈশাখ, জোর কদমে উদ্বোধনের প্রস্তুতি চলছে।
এরই মাঝে হঠাৎ বিনতার শরীরটা একটু খারাপ লাগছে গতকাল রাত থেকেই। এরকম তো হয়না… রাতের খাবার খেয়ে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র দেখে শুতে গেল, কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না, ফ্যান ফুল স্পীড তাও গরম লাগা কমছে না, শরীরটা আনচান করছে, এন্টাসিড খেলেন,গরমে হজমের গোলমাল ও হতে পারে।
ভোরের দিকে উঠে বাথরুম যেতে গিয়ে মাথাটা যেন ঘুরে গেল, বুকে একটা চাপ অনুভূত হলো, না ঠিক ভালো ঠেকছে না…
কেয়ারটেকার বাবুকে ফোন করলেন, ছেলেটি খুব ভালো, বিনতাকে খুব ভালোবাসে, ওর ওপর কেমন একটা অপত্য স্নেহপড়ে গেছে বিনতার।
এখানের আউট হাউসে বৌ বাচ্চাকে নিয়ে থাকে বেশ কয়েক বছর ধরেই, এখন বৃদ্ধাশ্রমের অনেক কাজই ও দায়িত্ব নিয়ে করে।
ফোন পেয়েই বাবু দৌড়ে হাজির দোতলায় বিনতার ঘরে, ঘড়িতে তখন ভোর সাড়ে চারটে, ঊষা লগ্ন।
বাবু আসতে বিনতা ওকে ইশারায় জল দিতে বললেন, বাবু দেখলো ম্যাডাম খুব ঘামছেন,জল খেয়েও আনচান ভাবটা কমলো তো নাই বরং বুকের বাঁ দিকে একটা ব্যাথা, বাবুকে বলতেই বাবু প্রমাদ গুনলো।হার্টের সমস্যা নয়তো… দৌড়ে নীচে গিয়ে বৌকে ওপরে ম্যাডামের ঘরে যেতে বলে নিজে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে গেল, কাছেই ড্রাইভারের বাড়ি তাকে ঘুম থেকে টেনে তুলে ম্যাডামের অবস্থার কথা বলে নিয়ে এলো, এবং ১৫ মিনিটের মধ্যে বিনতাকে নিয়ে কলকাতার বাইপাসের ধারে বড় হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। বিনতা বারন করেছিলেন, কিন্তু বাবু কোন রিস্ক নিতে রাজি নয়। হাসপাতাল পৌঁছতে আধঘন্টা লাগলো ভোরে রাস্তা ফাঁকা থাকে। হসপিটালে র এমার্জেন্সি তে ভর্তি করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সই করে বাইরে এসে দাঁড়ালো। সবে নতুন একটা দিন শুরু হলো বাইরে টা কি সুন্দর, আর মাত্র একদিন পরে পয়লা বৈশাখ, বৃদ্ধাশ্রম উদ্বোধনের সব ব্যাবস্থা তৈরী এদিকে ম্যাডামের এই অবস্থা কি যে হবে ভেবে কোন কুল কিনারা পাচ্ছে না বাবু।
এমার্জেন্সি থেকে বাবু কে ডাকলো, এবং ডাক্তারবাবু ওকে বললেন যে বিনতাদেবীর একটা মাইল্ড এ্যাটাক হয়েছে, ওনারা মেডিসিন দিয়েছেন এখন কদিন অবসারভেশানে থাকতে হবে। কিন্তু বিনতাদেবী থাকতে চাইছেন না, সেক্ষেত্রে আবার বড়সড় একটা কিছু ঘটে গেলে সামলানো মুস্কিল হবে। বাবু পরিস্থিতি টা বুঝে বিনতা ম্যাডামকে আশস্থ করলো যে উনি অনুমতি দিলে পয়লা বৈশাখ ই বৃদ্ধাশ্রমের উদ্বোধন হবে।
বিনতা কিছুটা নিমরাজি হয়ে অনুমতি দিলেন, কিছু তো করার নেই।
যাই হোক বাবুর ওপর অনেক বড় দায়িত্ব ন্যাস্ত হলো, বেশ বড় সড় একটি চিন্তা মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো। সকালে উঠে হসপিটালে ফোন করে খবর নিলো, এবং ম্যাডামের সাথে কথাও বললো, ম্যাডাম ওকে আজ হসপিটালে আসতে বারন করলেন কাল উদ্বোধন অনেক কাজ। বাবু হসপিটালে ডাক্তার বাবুর সাথে কথা বলে ঠিক করলো উদ্বোধন অনুষ্ঠান ভিডিও কলিং এর মাধ্যমে ম্যাডাম হসপিটাল থেকে দেখবেন।
যাই হোক পয়লা বৈশাখ সকাল থেকে সব দিক সামলে নিল বাবু,বিকেল সাড়ে চারটে থেকে নিমন্ত্রিত অতিথিরা আসতে শুরু করলেন, আর ভিডিও কলে হসপিটালে বসে সবটাই বিনতা দেখতে থাকলেন।
সব শেষে এলেন প্রধান অতিথি ডঃ অমিতাভ গাঙ্গুলী, সুপুরুষ সৌমকান্তি, স্টেজে উঠে নিদৃষ্ট আসনে বসার আগে ভিডিও কলে বিনতার সাথে কথাও বললেন, ওনাকে যেদিন আমন্ত্রণ করতে বিনতা গিয়েছিলেন সেদিন একটা এমার্জেন্সি অপারেশনে আটকে পড়েছিলেন তাই দেখা হয়নি, বিনতা ভেবেছিলেন পরে আর একবার যাবেন কিন্তু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় সেটা আর হয়নি, পরে বাবু ফোনে ডাক্তার বাবুকে সব বললে উনি এক কথায় রাজি হয়ে যান আসতে। যাই হোক সমস্ত অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হলো, এবং এখানেই বৃদ্ধাশ্রমের নাম রাখা হলো “স্বপ্ন নীড়”, মায়ের ইচ্ছে আর বিনতার স্বপ্ন মিলে স্বপ্ন নীড়।
অনুষ্ঠান শেষে ডাক্তার বাবু বাবুর কাছ থেকে ম্যডামের শারিরীক অবস্থার খবর নিয়ে একবার বিনতা কে দেখতে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। উনি নিজে একজন কলকাতার নাম করা কার্ডিয়াক সার্জেন, এবং কলকাতার হসপিটালে যে ডক্টরের আন্ডারে বিনতা আছেন তিনি ডঃ গাঙ্গুলী র বন্ধু, অতএব সহজেই সব ব্যবস্থা হয়ে গেল।
পয়লা বৈশাখের পরের দিনই ডঃ গাঙ্গুলী বিনতা কে দেখলেন এবং দুই ডাক্তার মিলে ঠিক করলেন একটা এ্যানজিও গ্রাম করা হোক, হলো এবং যথারীতি দুটি ব্লকও পাওয়া গেল, এবং স্থির হলো দুদিন পরেই স্টেন বসানো হবে অপারেশন করবেন ডঃ গাঙ্গুলী এ বিষয়ে উনি খুবই অভিজ্ঞ।
পূর্ব নির্ধারিত সকাল ১০-৩০মিনিটে বিনতার ও টি শুরু হলো…. যথা সময়ে নির্বিঘ্নে সমাপ্ত হলো। সন্ধ্যেবেলায় বাবু এসে দেখা করে চলে গেছে, বিনতা ভালোই আছে… রাত ৭টা নাগাদ ডঃ গাঙ্গুলী এলেন বিনতার সাথে হাল্কা কয়েকটা কথা বলে ও এর পরের পরিকল্পনা কি জানতে চাইলেন, বিনতা বললো “না সেরকম কিছু নেই আপাততঃ সুস্থ হয়ে স্বপ্ন নীড় কে একটু দাঁড় করিয়ে ভাবছি দেরাদুনের ফিরে যাবো”
ডঃ গাঙ্গুলী “দেরাদুনে কি আপনার সংসার”
বিনতা–“নানা সেই অর্থে সংসার আমার কোথাওই নেই, আমি ওখানের কলেজে দীর্ঘ দিন শিক্ষকতা করেছি তাই জায়গাটা আমার খুব পরিচিত , আর আমি তো একা মানুষ কখনও কলকাতা কখনও দেরাদুন এই করে কাটিয়ে দেবো”
ডঃ গাঙ্গুলী হেসে মাথা নেড়ে উঠে দাঁড়ালেন, বলে গেলেন কাল আর আসবেন না একটা ক্রিটিক্যাল ওটি আছে পরশু এসে একবার চেকআপ করে রিলিজ করে দেবেন।
বিনতা ভালোই আছেন সারাদিন শুয়ে বসে ভালো লাগেনা উপায়ও নেই বিকেলে সিস্টারদের সাথে একটু হাঁটলেন লম্বা কড়িডোরে, গল্পে গল্পে জানলেন ডঃ গাঙ্গুলী একাই থাকেন বাইপাশের ধারে বেশ অনেকটা জায়গায় ওনার বাংলো বাড়ি, তবে সিস্টাররা শুনেছে সম্প্রতি উনি ঠিক করেছেন বাড়িটি রামকৃষ্ণ মিশনকে দান করে দেবেন। বিনতা বললো উনি তাহলে থাকবেন কোথায়? ওরা সেটা জানেনা।
পরেরদিন ডঃ গাঙ্গুলী এলেন সকাল ১১টায়, বিনতা জলখাবার খেয়ে স্নান সেরে বই পড়ছিলেন ডঃ গাঙ্গুলী এসে বললেন “কেমন আছো বিন্নি”
বিনতা চমকে গেলেন, বিন্নি… এ নামে তো মা ডাকতেন আর ছোট বেলায় পাড়ার খেলার সাথী রা। এনাম উনি জানলেন কি করে?
ডঃ গাঙ্গুলী হাসলেন, “খুব অবাক হলে তো? তুমি তো আমায় চিনতে পারোনি আমি কিন্তু সেদিন ভিডিও কলেই তোমায় চিনেছিলাম, আমি সেই অন্তু, মনে আছে আমাকে?” বিনতা যেন আকাশ থেকে পড়লেন, “অন্তু তুমি এখানে, কি করে চিনলে আমায়? ”
“কেন চিনবোনা তোমার ঐ গজ দন্ত আর ঠোঁটের নীচের তিলই তোমায় চিনিয়ে দিলো”
এতো বছর পরে ছোট বেলার খেলার সাথীকে পেয়ে বিনতা মহা খুশি অনেক গল্প হলো, শেষে ডঃ গাঙ্গুলী বললেন বিকেলে উনি নিজে এসে বিনতা কে নিয়ে স্বপ্ন নীড়ে পৌঁছে দেবেন।
বিনতা কার্ডে হসপিটালে র পেমেন্ট মেটাতে গিয়ে দেখলেন ডঃ গাঙ্গুলী কোন ফিজ নেননি। বিকেলে ডঃ গাঙ্গুলী কে সেকথা জিগেস করাতে হেসে বললেন “অন্তু কি বিন্নি র কাছ থেকে টাকা নিতে পারে”
এরপরে আর কিছু বলার নেই, আগেই বাবুকে আসতে বারন করে ছিলেন বিনতা, ডঃ গাঙ্গুলী র সাথেই যাবেন বলে।
নীচে নেমে ডঃ গাঙ্গুলী র গাড়ি করে রওনা দিলেন। বড় ইনোভা, পিছনের সীটে একটা বেশ বড় সুটকেস, বিনতা কিছু বুঝতে পারলেন না।
যাই হোক স্বপ্ন নীড়ে পৌঁছে খুব ভালো লাগলো, যে কজন বোর্ডার এসেছেন সবাই বাইরে এসে বিনতা ম্যাডাম কে নমস্কার করে একটা মস্ত বড় ফুলের তোড়া দিলেন। বিনতা এগিয়ে যেতে গিয়ে পিছন ফিরে ডঃ গাঙ্গুলী কে ডাকতে গিয়ে দেখলেন বাবু বড় সুটকেস টা নামিয়ে লিফ্টের সামনে রাখলো, বিনতা কিছু বুঝতে পারছিলেন না, উনি লিফ্টের কাছে যেতেই ডঃ গাঙ্গুলী ও এলেন সবাই মিলে তিন তলায় উঠে এসে বিনতা নিজের ঘরের দিকে যেতে গিয়ে দেখলেন তার পাশের ঘরে ডঃ গাঙ্গুলী র সুটকেস রাখলো বাবু।
এবার ডঃ গাঙ্গুলী নিজেই হেসে বললেন আজ থেকে আমিও স্বপ্ন নীড়ের একজন বোর্ডার।
বিনতা একটু হেসে চুপ করে থাকলেন, তারপরে নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেস হয়ে জানলার ধারে, খাটে বসে বাইরেটো দেখতে দেখতে ভাবছেন এটা কি হলো অন্ত হঠাৎ এভাবে নিজের ঘর বাড়ি ছেড়ে এখানে চলে এলো কেনো?
কিছুক্ষণ পরে ডঃ গাঙ্গুলী, এলেন, একটা চেয়ারে বসে এক মনে বিনতা কে দেখছেন, বিনতা একটু লজ্জা পেয়ে বললো “কি দেখছো অমন করে? আর তাছাড়া তুমি ঘর বাড়ি ছেড়ে এখানে চলে এলে কেন”?
“জানি তুমি খুব অবাক হলে, আগে বলি তোমায় দেখে ভাবছিলাম অবশেষে খুঁজে পেলাম বিন্নি কে, যার খোঁজে জীবনের এতো গুলো বছর একাই কাটালাম….আর কেন বাড়ি ঘর ছেড়ে চলে এলাম? এখন আমার বাড়ি তো এটাই, ঐ বাড়ি রাম কৃষ্ণ মিশনকে দিয়ে দিলাম”
বিনতা একটিও কথা বললো না চোখে এক পরম শান্তি।
কয়েক দিন পরে বেশ ভোরে ওরা দুজনে গাড়ি করে বেরিয়ে গেলেন, ফিরলেন বিকেলে, বিনতার সিঁথি তে শরু সিঁদুর, রেজিস্ট্রি অফিস থেকে বেরিয়ে বিপত্তারিণী মন্দিরে মাকে সাক্ষী রেখে দুজনে জীবনের বাকি কটা দিন একসাথে কাটাবার অঙ্গীকার করে ফিরে এলেন স্বপ্ন নীড়ে। অন্তুর কৈশোর জীবনের স্বপ্ন আজ শেষ বয়সে পেলো নীড়, আর বিনতার হলো একাকীত্বের অবসান…
(কলমে—নীরা মিত্র)