*****#শাস্তি***** ©স্বপ্না বিশ্বাস
*****#শাস্তি*****
©স্বপ্না বিশ্বাস
#মহামায়া আজ ভীষণ খুশী। ছোট মেয়ের বিয়ের পাকা কথা হয়ে গেলো। মনের মতো উপযুক্ত পাত্র ও তার পরিবার। তবে বিয়ের তারিখ সামনের মাসেই। এতো তাড়াতাড়ি সব যোগাড়যন্ত্র করতে হবে,একথা আলোচনা করবেন ভেবে হাতের কাজ সেরে শোওয়ার ঘরে ঢুকে দেখেন আদিনাথ ঘুমিয়ে পড়েছেন। দোর্দণ্ডপ্রতাপ ব্যারিস্টার আদিনাথ মজুমদার শিশুর মতো সরল লাগছেন ঘুমন্ত অবস্থায়।তাঁর ছাড়া জামাকাপড় কাচার জন্য রাখতে গিয়ে,অভ্যস্ত হাতে পকেট দেখে নিচ্ছিলেন মহামায়া। হাতে এলো কিছু টাকা পয়সা ও একটা খাম। কে চিঠি দিল? এই ভেবে চিঠিখানা খুলে পড়তে লাগলেন। মনে হল তার শরীরের সব রক্ত জমে গেছে, পায়ের তলার মাটি কাঁপছে।ধপ করে মাটিতে বসে পড়লেন মহামায়া। তার স্বামীর অন্য একটি মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে!! তাদের এক কন্যাও আছে!! হা ভগবান!! মেয়েটি, যার নাম পদ্ম, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। আদিনাথের কাম চরিতার্থ করবার ক্ষমতা নেই বলে এঁটো শালপাতার মতো ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন, মাসোহারাও বন্ধ। মহামায়ার মনে হলো চিৎকার করে ওই লোকটাকে টেনে তুলে ওর মুখোশ টা টুকরোটুকরো করে ছিঁড়ে দিতে, তছনছ করে দিতে সবকিছু।এতো কাল তার সাথে ছলনা তো করেছেন ই,আবার আর একটি মেয়ের সাথে ব্যভিচার করে তাকেও পরিত্যাগ করতে চাইছেন।এ ভয়ানক পাপ মেনে নেওয়া যায় না। শুধু ছোটমেয়ের কথা ভেবে বহু কষ্টে নিজেকে সংযত করলেন।ঠিকানাটা লিখে নিয়ে চিঠিটা যথাস্থানে রেখে দিলেন।নিঃশব্দে চোখের জলের বন্যা নামল গাল বেয়ে।
#মেয়ে জামাই কাল বিদেশে চলে গেলো। তিনি আজ ড্রাইভার কে ভোরে আসতে বলেছিলেন, কেউ ওঠবার আগে তিনি সেই ঠিকানায় চললেন। নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে কড়া নাড়তে একটি বছর দশেকের ফুটফুটে মেয়ে দরজা খুললো। ” তোমার মা কই? আমি তার দিদি “। খাটের উপর শীর্ণ পদ্ম তার সব সৌন্দর্য হারিয়ে শুয়ে আছে। মহামায়া তাকে নিজের পরিচয় দিতে সে ডুকরে কেঁদে উঠলো। ” কেঁদো না বোন, আমি থাকতে অবিচার হতে দেবো না, চলো আমার সাথে ”
#গাড়ি ঢোকার আওয়াজ পেয়ে আদিনাথ সিঁড়ি দিয়ে নামছিলেন,একতলার দক্ষিণের ঘর থেকে মহামায়ার গলার স্বর শুনে,ঘরে ঢুকে পদ্ম আর তার মেয়েকে দেখে চমকে গেলেন।চাপা ধমকের সুরে বললেন ” কোন সাহসে এদের এখানে এনেছ?”। স্বামীর চোখে চোখ রেখে মহামায়া বললেন “তোমার সহধর্মিণী বলে।তোমার পাপ পুণ্য সব কিছুর ভাগীদার যে আমি।যে পাপ করেছ তার তো প্রতিকার নেই, কিন্তু যে অপরাধ করছিলে এদের তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে, আমি সেটার প্রতিকার করলাম।আদালতে দাঁড়িয়ে অপরাধীর শাস্তির জন্য সওয়াল জবাব করো,আজ তোমার শাস্তিবিধান আমি করলাম, এরা এখানেই থাকবে, তুমি এদের প্রতিপালন করতে বাধ্য”।
দৃপ্ত ভঙ্গিতে মহামায়া হতবাক আদিনাথের সামনে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
©স্বপ্না বিশ্বাস