নিশিযাপন —- দুলাল কাটারী
নিশিযাপন
দুলাল কাটারী
রাত্রি বারোটা বাজে, এখনো ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি চলছে সমানতালে।
বিকেল থেকেই বেশ জমকালো মেঘে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে ছিলো আকাশ খানি।
তবে চড়াই গুলি কিন্তু দিব্যি কার্ণিশের ফাটলে মুখ গুঁজে, দুচোখ বন্ধ করে রাত্রি যাপনে মগ্ন হয়েছে।
আজ মনে হচ্ছে তোমার স্বামীর মতো সব স্বামীই ঘরে যা খাবার আছে তাই দিয়েই চালিয়ে নিতে বলবে,
মনে হয়,
বাইরে কেউই যাবে না,অথবা বলা যায় যেতে পারবে না।
তাই পাড়ার গলিতে কুকুর গুলোও কিন্তু চিল্লাচ্ছে না অভদ্রের মতো।
আজ সকালেও তুমি নিশ্চয়ই কিছুটা শুদ্ধ হয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলে?
ফুল চন্দনে সাজি খানা বেশ সুন্দর করেই সাজিয়ে ছিলে?
কারণ তোমাকে তো রোজই দেবতার সন্নিকটে যেতেই হয়।
একের পর এক নাম বেনামের রংবাহারী ফুল তোমার হাতে স্বেচ্ছায় জীবন দান করে।
তাই, কি সুন্দর মৃদুস্বরে গুনগুনিয়ে ব্রত গানের সাথে চালিয়ে যাও হত্যা লীলা।
কি সুন্দর রীতিনীতি মেনে তোমার হৃদয়ে গেঁথে দেওয়া হয়েছে এক কলুষিত বিশ্বাসের মালা —
স্বামী পবিত্র,দেবতা পবিত্র, ফুল পবিত্র ইত্যাদি ইত্যাদি…
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই আমার মাথার যন্ত্রনাটা প্রকট হচ্ছে অনুভব করলাম।
দীর্ঘ জীবনযাপনের রাত্রি যাপন এভাবেই চলে আসছে আমার।
এদিকে ঘড়ির কাঁটায় তিনটে পেড়িয়েছে।
যদিও প্রেমে প্রতিশোধ কথাটা ঠিক মানায় না
তবুও
এ যেন নিজেকে নিজেরই পায়ে পিষে ফেলার এক অব্যর্থ প্রচেষ্টা,নির্ঘুম নিশিযাপন।
অথবা
তোমার ছায়া,মায়া এবং কায়ার এক গভীর চক্রান্তের অনুসারী হওয়ায় প্রবনতা…
তোমার ঘুম হয়তো খুব জমকালো মেজাজেই ভোরের দিকে এগিয়ে চলছে অথবা তুমিও হয়তো রয়েছো জেগে,
কিন্তু একটি বারও আমাকে ঘুমিয়ে পড়তে বলতে পারার মতো নির্লজ্জ হতে পারছো না তুমি,
কারণ আমার দুটি চোখ থেকে যেদিন তুমি ঘুম কেড়ে নিয়েছো সেদিন থেকেই আমাকে ঘুমিয়ে পড়তে বলার অধিকারও হারিয়ে ফেলেছো নিজেই নিজের মতো করে।