অনভিজ্ঞ দাঁড়িপাল্লা —– রাজেন্দ্র দে

অনভিজ্ঞ দাঁড়িপাল্লা

রাজেন্দ্র দে

চলমান কক্ষপথে পৃথিবী সচল হলেও থমকে দাঁড়িয়েছে সময়
দিনটা রাত্রি দিয়ে ঘেরা
রাতের নীরবতা শহরের আনাচে কানাচে
ঠাণ্ডা মাছ আধ শুকনো অনাজ ফেরি হয় অনভিজ্ঞ দাঁড়িপাল্লায়।

অফিসের তালায় ধুলো জমেছে, সিনেমার পর্দায় ঝুল
ট্রেনের হকার বন্ধুর হাঁকডাক স্মৃতির পাতায়
রেললাইনের আগাছা গুলো প্রাণ পেয়েছে
ভাত ঘুমে হাওড়ার ব্রীজ, কোলাহলের স্মৃতিতে ডুবে জং ধরা সকট ইঞ্জিন।

শিল্পীর চেহারায় আজকাল রঙের বড়ই অভাব
পাণ্ডুর ক্যানভাসের ঠোঁটে চাতকের পিপাসা
পৃথিবীটা অমল, সুধারাও তাকিয়ে জানালার দিকে
কাঁধে এক পাহাড় ভার নিয়ে করুণ সুরে হেঁকে যায় দই ওয়ালা।

মৃত্যু কণাগুলো বাতাসে মিশেছে ঘুনধরা প্রাচীর ভাঙতে ভাঙতে
কালো পোড়া রুটিতে শ্রমিক বাক্য হীন হাজার জনতার ভীড়ে
দু চোখের পাতায় জীবন কাননের ফুটন্ত গোলাপ
মহরতের কিছুটা পরেই পাশার আসর বসায় ইমন আর কেদার।

মৃদু আর্তনাদে ক্ষুধার্ত শিশু, অশেষ হাহাকার বুকের ভেতর
চারপাশের বিপন্ন শব্দগুলো স্পর্শহীন ভাবে বেপরোয়া ঘুরে বেড়ায়
কালো পিচ ঢালা রাস্তায় একরাশ শূন্যতা
গৃহবন্দীর আলেখ্যে পূর্ণস্নান করছে পৃথিবী।

অতলান্ত আকাশের এক কোণে মেঘ হয়ে জমে থাকে মধ্যবিত্ত মন
দু কানে হাত দিলেই রাবনের চিতার আগুন
মৃত্যুমিছিলে পা মেলায় লাখো মানুষ
রেশনের দোকানে জমাট বাঁধে অভুক্তদের লবেজান সাহসী কোলাহল।

সমাজের কাখতলিতে থার্মোমিটার বসিয়ে দিব্য দর্শনে শাসক
উলঙ্গ পৃথিবীতে নাচে কালো বাজারীর ত্রাতা
কাস্তের গা বেয়ে তাজা রক্ত, হাতুড়িতে জমে অলসতার ঘাম।

পথের বাঁকে যদি থমকে দাঁড়াই ভেবো না আমি পথ ভুলেছি
বিপন্ন জীবন অবিশ্বাসের লাল চোখ,
অসুস্থ পৃথিবীর বুকে মাথা রেখেও তোমার পদতলে আমার আ’মি’টা
আমি শুধু অবাক, শুধু অবাক হয়েছি
একবুক আগুন নিয়ে আজও বসে আছে আমার প্রেমিকা

সেদিন সন্ধ্যা নেমে ছিল পৃথিবীর ধার ঘেঁষে
কালো জমাট মেঘের দর্শনে নীল আকাশকে ভুলে যায়
তারাদের ক্ষীণ আলোও অধরা থেকে যায়
অসহায় বসতি ত্রিফলা আলোয় স্বপ্ন বোনে।

দাঁত মুখ বার করে উল্লাস করে চিতাভস্মের ছাই।
পা দুটো পাথর হয়ে যায়,
ফাঁদের মাঝে চুপ করে বসে থাকা মাকড়সার মতো ঘরকুনো হয়ে।
একান্নবর্তী হাঁড়িতে শুধু জল ফোটার শব্দ আরও তীব্র হয়।

হাসপাতালের বেডে শুয়ে সংক্রামক
অসুস্থ ছেলের হাত ধরে দিনের পর দিন শুকনো মুখে বাবা
টিভির পর্দায় রাজনৈতিক তরজা
কবিরাজ সেলাইনের বোতলে দেখে আশার আলো।

আকাশ পরিস্কার হয়
পর্বতের শিখর আর সমুদ্রের তলদেশের মাঝে আ’মি হেঁটে যায়
সামাজিক দূরত্বের সাথে সাথে দূরে চলে যায় তোমার তুমি’টা
ছাই চাপা বিকল্প সম্পর্কটা জীবন্ত হয়ে উঠে
বাঁধের ফাটলে বিষণ্নতা চুঁইয়ে পড়ে বিবেকের অস্তে।

রাজেন্দ্র দে
দেউল গ্রাম, বাগনান, হাওড়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *