।। বঙ্গ জাগরণ।। কলমে: অর্ণব পাল
।। বঙ্গ জাগরণ।।
কলমে: অর্ণব পাল
সে সময় ছিল মাৎসন্যায়ের যুগ। এক চূড়ান্ত অস্থিরতা গ্রাস করেছিল সমগ্র বঙ্গভূমিকে। শশাঙ্ক প্রতিষ্ঠিত গৌড় বংশ তখন অস্তমিত। কিন্তু “গৌরতন্ত্র” অর্থাৎ চূড়ান্ত নৈরাজ্য তখন বিরাজমান সমগ্র বাংলায়। সামাজিক জীবনে বাঙালির অধঃপতন তখন ভারতবাসীর ঠাট্টার বিষয়।
প্রাগজ্যোতিষ্পুরের কাছে এক ছোট্ট মহাল। নাম তার বিরপুর। তার শাসক ব্যাপট। প্রবল পরাক্রমী ব্যাপট তাঁর রাজত্বে ঢুকতে দেননি নৈরাজ্য। বুদ্ধি ও ক্ষমতাবলে রক্ষা করে চলেছেন তাঁর প্রজাদের। কিন্তু একটাই চিন্তা তাঁর, এর পর কি হবে। রাজকুমার হিন্দু ঘরে জন্ম নিয়েও কেমন তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে মাতামাতি করে। রাজত্বে মন নেই।
একদিন রাত্রি দ্বিপ্রহর। রাজবাড়িতে সবাই ঘুমিয়ে। রাজকুমার রোজ রাতের মতো তন্ত্র করে শোবার ঘরে ঢুকতে যাচ্ছেন হঠাৎ দেখেন দূরে কিসের কোলাহল এবং কান্নার আওয়াজ। তিনি তৎক্ষণাৎ ঘোড়ার পিঠে ঐদিকে ছুটলেন। গিয়ে পৌঁছে দৃশ্য দেখে তাঁর হাড় হীম হয়ে গেল।
একদল যবন সৈন্য এক সহস্র বঙ্গ নারী ও শিশুকে পশুর মতো রজ্জুতে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকে নগ্ন। উত্তুরে হাওয়ায় যেখানে আপাদমস্তক ঢাকা সৈন্যরা অবধি কেঁপে কেঁপে উঠছে, সেখানে নারী ও শিশুদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। তাঁদের অসহায় ক্রন্দনে রাতের আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে।
রাজকুমার এই দৃশ্য দেখে ক্রোধে উন্মাদ হয়ে গেলেন। দুই চোখে যেন দাবানল জ্বলে উঠলো। তিনি ক্ষিপ্রহস্তে এক যবন সৈন্য কে ঘায়েল করে কেড়ে নিলেন তার হাতের তরবারি। তারপর তিনি মত্ত হাতির ন্যায় এক ভীষণ ও অসম্ভব যুদ্ধ শুরু করলেন।
ধন্য বঙ্গ জননী! ধন্য বঙ্গ বীর। একাই তিনি ছিন্ন ভিন্ন করে দিলেন যবন সেনা কে। তাদের রক্তে রঞ্জিত প্রান্তর শুধু বুকে ধরে রাখল এমন অসামান্য বীরত্ব।
ইতিমধ্যে রাজকুমারের খোঁজে বেরোনো হিন্দু সৈন্যরা যুদ্ধ কোলাহল শুনতে পেয়ে তারাও যোগ দিল যুদ্ধে। অল্পক্ষণেই নিঃশেষিত হলো যবন সেনা। রাজকুমার সসম্মানে নারী ও শিশুদের আশ্রয় দানের আদেশ করে প্রস্থান করলেন।
দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়লো এই বীরত্বের কাহিনী। বিরপুরে ছুটে এলেন দাভক, প্রাগযোতিষ্পুর, কর্ণ সুবর্ণের সামন্ত প্রভু রা। তাঁরা সবাই স্থির বুঝেছিলেন যে এই রাজকুমারই পারেন দেড়শ বছরের মাৎস্যন্যায়ের হাত থেকে মুক্তি দিতে বঙ্গভূমিকে। দেশের জন্য তাঁরা রাজকুমারকে কে অনুরোধ করলেন বাংলার সিংহাসন গ্রহণ করতে। পিতার অনুমতি নিয়ে রাজকুমার সেই অনুরোধ মেনে নিলেন। এই বীর রাজকুমারের সিংহাসন আরোহণের ফলে বাংলার বুক থেকে মাৎস্যন্যায় দূর হয় এবং বাংলার ইতিহাসে নবযুগের সূত্রপাত ঘটে।
পাঠক, এই বীর রাজকুমার আর কেউ নন, পালবংশের প্রতিষ্ঠাতা স্বনামধন্য সম্রাট গোপাল।
***********&&&&&&&&&********************