অস্থায়ী জানলা —- কলমে #শ্বেতা_ব্যানার্জী
![](https://www.dinajpurdaily.com/wp-content/uploads/2021/05/covid-propaganda-edited.jpg)
অস্থায়ী জানলা
কলমে #শ্বেতা_ব্যানার্জী
” পাত্রখানা যায় যদি যাক ভেঙেচুরে—–
আছে অঞ্জলি মোর,
প্রসাদ দিয়ে দাও-না পুরে”
আমাদের জীবনের পথ চলার পূর্বপ্রস্তুতি কবিগুরু করে দিয়ে গিয়েছিলেন। সব কিছুর মাঝেই কবির ইতিবাচক চিন্তা ….।
জীবনের ভাবনা- চিন্তাগুলো কেমন যেন আড়ষ্ট করে রাখতো শর্মিকে,কিন্তু যেদিন কবিগুরুর এই ক’টি লাইন সুনন্দ ভরাট গলায় গেয়ে উঠলো…
সেদিনই চোখের সামনে ধরা দিল ইতিবাচক শব্দটা।
শর্মি খুব আশাবাদী মনের ছিলনা। অনেকেই তার গুমরে থাকা মনকে ব্যঙ্গ করতো। তার চোখের সামনে যা কিছু ধরা দিত, তাতেই সে নেগেটিভ খুঁজে নিত। এই মহামারী কালে সে ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিল।
আজ সুনন্দ এসে বললো চলো..
কোথায়? জাহান্নামে ; একমাত্র সেখানে গেলেই মানুষ ভালো থাকে। সকলের কথা ভেবেই এখন নিজেকে ভালো রাখতে হবে, একজন সুস্থ নাগরিক আর পাঁচটা সুস্থ নাগরিকের জন্ম দান করতে পারে।
আমি গাড়ি সেনিটাইজ করে নিয়ে এসেছি..আর আমি চিন্তায় পজিটিভ, রোগ দান নেগেটিভ। সো…
লেটস্ গো…
হুড খোলা জিপ। হু হু ঠাণ্ডা বাতাসে হাত ও পা
আড়ষ্ট হয়ে আসছে, সুনন্দ বললো, লেটস সেলিব্রেট ব্র্যান্ডিতে একটা চুমুক দাও দেখবে জীবনের সাড়া পাবে। তুমি কী জানো দেনা শোধ না করলে জেল হয়! বন্ধুত্বের প্রতিশ্রুতিও একটা দেনা, ভালোবাসার এই খামতি আমি জাস্ট নিতে পারছিনা। আমার উপর কী তোমার একটুও আস্থা নেই! ‘ওগো রূপসী প্রিয়তমা ‘
না,না, পৃথিবীতে আমার মতন সুখী আর কেউ নেই। আজ আমি বুঝতে পারছি যে তুমি আমায় কতটা ভালোবাসো, তোমার এই ঝোড়ো স্বভাব আমাকে জাগিয়ে তোলে….
ইয়েস ম্যাডাম, এটাই প্রাণশক্তি।
“নরম্যান ভিনসেণ্ট গেইল” যাঁর একজন গুণমুগ্ধ পাঠক আমি। পাশে বসে পিঠে আলতো হাত রেখে সুনন্দ ক’টি লাইন গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠলো…
“উই শ্যাল ওভার কাম”
তুমি জানো সুনন্দ,… আমি কতদিন ঘুমোইনি, সারাক্ষণ শুধু চোখ দিয়ে জল গড়িয়েছে, আমি সারাক্ষণ কেঁদেছি, আমি চোখ চাইলেই দেখছি অফুরন্ত সময়ের হাহাকার, কোনো বন্ধু, আত্মীয়, পরিজন কাউকে সামনে দেখছি না। মাধ্যম বলতে শুধুই ফোন।শুধুই কষ্ট আর নিঃসঙ্গতায় ভরা বছরগুলো… শুধুই কিছু নেইয়ের ছবি–
তা-ই তো আমি এলাম ডালিং,
এসো, জীবনে ঘনিষ্ট হই,সেন্সর ব্যবস্থা তুলে দি–
নিষিদ্ধ বলে কিছুই থাকবেনা।
শর্মি লজ্জায় দু’হাত দূরে সরে যায়। সুনন্দ বলে, দূর পাগলি… তোমার হিউমার এখনো জেগে আছি কিনা তার পরীক্ষা নিলাম–
শোনো তোমায় একটা গল্প বলি, গল্পটা চিন দেশের।
গল্পটি এরকম: এক গৃহস্থের উঠোনে এক বিরাট পাতকুয়ো ছিল, তা একদিন প্রতিবেশীরা তাদের বাড়ি থেকে কান্নার রোল পায়, ভাবে কী হলো, পাতকুয়োতে কেউ কী পড়ে গেলো, কারণ পাতকুয়োর পার বাঁধানো ছিলনা। কিন্তু তারা এসে যা শুনলো চোখ চড়কগাছ ;
পরিবারের ভয় তাদের সন্তানাদি হলে যদি খেলতে গিয়ে কুয়োতে পড়ে যায়, তা-ই তারা স্থির করছে সন্তানাদি নেবে না। আর সেই দুঃখ থেকে কান্না।
তোমার অবস্থা অনেকটা এই পরিবাবের মতন, সব সময়েই সব জায়গায় দুশ্চিন্তা খোঁজা।
আমি স্বীকার করছি খবরের কাগজ দেখলে,খবর শুনলে যে কেউ এক ধরনের হতাশা অনুভব করবে। এরাও প্রতিযোগিতায় নেমেছেন এখন হচ্ছে করোণার খবর। সারাজীবন দেখে এসেছি বেঁচে থাকতে হলে মানুষের রোগ-শোক হয়, কিছুদিন ভুগে আবার ভালো হয়ে যায়। আমরা ভ্যাক্সিন বের করে ফেলেছি, আগের থেকে সুস্থতার হার অনেক বেশি।
/
জীবনকে’ এনজয় করো, সবরকম সাবধানতা নিয়েই আমরা সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকবো।
“পাওয়ার অফ পজিটিভ থিংকিং” নিজের ভিতর সেই পাওয়ার টা আনার চেষ্টা করো। ইতিবাচক চিন্তা, এটাকে যদি মাধ্যম ভাবো তাহলে জীবনের অনেক অত্যাবশকীয় সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
জীবনে সফল ও সুখী হতে গেলে ইতিবাচক চিন্তা
এক সুস্থ জীবনদায়ী ওষুধ।
খবরের কাগজ পড়ে কারো যদি মন খারাপ হয়, কেউ যদি হতাশা অনুভব করে আমরা তো তাকে দোষ দিতে পারি না। তবুও তার মধ্যেই আশাবাদী হয়ে বেঁচে থাকার একটা অনেক বড়ো সুবিধা আছে, ভয়ংকর দুঃসময়টিও সাহস নিয়ে পার করে দেওয়া যায়! আমরা জানি আমরা তা পার করতে পারবো!
সুদিন আসবেই , নিশ্চয় আসবে। সবুজের মাঝে আমরা চির স্থায়ীত্ব পাবো, আমি আশাবাদী,, তুমিও হও প্লিজ —- শোনো, আমরা যদি আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করি,ভয় বা শঙ্কার দিকে ফোকাস না করে আশা ও সম্ভাবনার দিকে ফোকাস করি —
তাহলেই জীবন থেকে ভয় দূর করে আমরা সকলেই এই মহামারীকে জয় করবোই… আমরা এই পৃথিবীতে অস্থায়ী আগন্তুক,যেখানে গতি আছে সেখানে গন্তব্য তো থাকবেই, তা-ই নিয়ে ভাবনা বা ভয় নিয়ে চললে হবেনা। যে ক’দিন আছি জীবনকে চেটেপুটে উপভোগ করো।
রবীন্দ্রনাথের ব্রহ্মভাবনায় লেখা —
“” ওরে মৃত্যু, জানি তুই আমার বক্ষের মাঝে বেঁধেছিস বাসা”
তাই মৃত্যু চিন্তা নয়, নয় ডিপ্রেশন, তৃপ্তির সারেঙ্গী তে উঠুক সুর “উই শ্যাল ওভার কাম”
আমরা ঈশ্বরের কাছে শুধুই প্রার্থনা করতে পারি জীবাণু মুক্ত পৃথিবী দিয়ে তুমি সুস্থ পৃথিবীর জনক হও।
আমার প্রিয়তমা, ইতিবাচক হও, দেখবে সুস্থ চিন্তা
বাস্তবতার দিকে নিয়ে যাবে…
আমার সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলো…
“আমরা করবো জয় নিশ্চয়ই, এই মনে আছে বিশ্বাস
আমরা করবো জয় নিশ্চয়ই…।