ভয় কে জয় —- তুলি মুখার্জি চক্রবর্তী
ভয় কে জয়
তুলি মুখার্জি চক্রবর্তী
৪/৫/২১
নিজের ব্যবসা, ছবি আঁকা আর শেখানোর ক্লাস নেওয়া ছাড়াও পাড়ার ছেলেদের নিয়ে একটা ক্লাবও চালায় আবির। বাবা মা বৌ ছেলে মেয়ে নিয়ে ঘর সংসার করার বাইরে সমাজসেবা করা, দুঃস্থ অসহায় মানুষের পাশে থাকা ওর নেশা। কাউকে পড়ার খরচ দেওয়া, কারও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, ফুটপাথে থাকা অসহায় মানুষের খাবার ব্যবস্থা করা এসব করেই চলছিল এত বছর।
কিন্তু গতবছর সব কিছু ওলোট পালট করে দিয়ে এলো এক ভয়ংকর অতিমারী, প্রথমে মানুষ এর ভয়াল রূপ বুঝতে পারেনি। কয়েকমাসের মধ্যেই সে তার শক্তি প্রদর্শন করে মারতে শুরু করলো মানুষ। হ্যাঁ মানুষই এর শিকার। অন্য কোনও প্রাণী নয়। কিভাবে কে কার থেকে সংক্রামিত হচ্ছে সেসব নির্ধারণ করার আগেই মৃত্যু হচ্ছে একের পর এক। এরপর আরও আক্রান্ত এই ছোঁয়াচে অসুখে, আরও ভয়ংকর অবস্থা। কেউ কেউ ভালো হয়ে বেঁচে ফিরে এলেও মনে আতংকের রেশ রয়ে যাচ্ছে। মানুষ এত ভীত যে কেউ অসুস্থ হলে তাকে একঘরে করছে সামান্য সাহায্যটুকু না করে। তাতে অবস্থা আরও ভয়ংকর। কেউ অসুস্থ হলে বাড়ির লোক তা প্রকাশ করতে চাইছে না একঘরে হবার ভয়ে।
এইরকম একটা পরিস্থিতি যখন, ডাক্তার, নার্স, হেল্থস্টাফরা নাজেহাল, দেশজুড়ে লকডাউনের ফলে না খেয়ে গরীব মজদুর মারা যাচ্ছে একদিকে, অন্যদিকে ছোঁয়াচে অতিমারীতে লোক অসহায়, তখন আবির এগিয়ে এলো তার ক্লাবের ছেলেদের নিয়ে। টাকা সংগ্রহ করে গরীব মানুষদের খাবার ব্যবস্থা করা, পুরোনো, নতুন জামা জোগাড় করে সবাই কে দেওয়া।
ওদিকে একের পর এক চেনা বয়স্ক মানুষের আক্রান্ত হওয়ার খবর। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে জেনে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা, বেশি বাড়াবাড়ি হলে হসপিটালে ভর্তি করা সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরেই মানুষের পাশে সে।
একদিন এই ছোঁয়াচে অসুখ তাকেও ছুঁলো। ডাক্তারদের পরামর্শ মেনে কিছুদিনের মধ্যেই জিতে ফিরে এলো আবির।
কয়েকমাস কেটে গেছে। আবার সব আগের মতোই ঠিকঠাক। মানুষ সবাই খুশি। ঘোরাফেরা, হোটেল রেস্টুরেন্টে খাওয়া, সিনেমা দ্যাখা, শপিংমল যাওয়া…. সব আগের মতোই। কিন্তু
অলক্ষ্যে হেসেছিল শয়তান।
দ্বিগুণ তেজে চেহারা বদলে ফিরে এলো আগের ছোঁয়াচে অতিমারী। এবার আরও মানুষ আক্রান্ত, মৃত্যুর ভয়াবহতা আরও অনেক বেশি।
আবির যথারীতি তার ক্লাবের ছেলেদের নিয়ে নেমে পড়েছে মানুষের কাজে, মানুষের পাশে, মানুষের মতোই।
চিকিৎসার ব্যবস্থা করে, ওষুধ, খাবারের জোগাড় করে, অনেককেই সুস্থ করে তুলছে। যাদের দেখভাল করার কেউ নেই তাদের থাকার ব্যবস্থা করেছে ক্লাবের ঘরেই। ক্লাবের সামনের মাঠে অস্থায়ী তাবু করে অসুস্থ লোকেদের থাকার ব্যবস্থা সব করেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্যে।
দেশসেবায় ব্রতী একজন অনামী মানুষ ভয় কে জয় করে দশের সেবায়।।