তীর্থের পথে পথে — ঋষিকেশ —- কোয়েলী ঘোষ

তীর্থের পথে পথে –ঋষিকেশ
কোয়েলী ঘোষ

হিমালয়ের পাদদেশে উত্তরাখণ্ডের একটি শহর ঋষিকেশ । দীর্ঘকাল মুনি ঋষিরা এখানে তপস্যা করেছেন বলে স্থানটির নাম ঋষিকেশ ।
নীলকণ্ঠ হিমালয় দর্শন করে আমরা এসে পৌঁছলাম ঋষিকেশ ।
হরিদ্বার থেকে মাত্র ২৪ কিলোমিটার দূরে ঋষিকেশ ।
চন্দ্রভাগা আর গঙ্গানদীর সঙ্গমস্থল । জলের রঙ স্বচ্ছ নীল ।


এখান থেকেই শুরু হয় কেদার ,বদ্রীনাথ ,গঙ্গোত্রী , যমুনোত্রী – এই চার ধাম যাত্রা । সাধু , মহাত্মা , তীর্থ যাত্রীদের চরণ স্পর্শে এই তীর্থের ধূলিকণা পবিত্র ।
প্রথমে আমরা পৌঁছলাম ত্রিবেণী ঘাটে । গঙ্গা , যমুনা , সরস্বতী এই তিন নদীর ধারা এসে মিশেছে এখানে । চারিদিকে সবুজ অরণ্য ঘেরা পাহাড় ঘিরে আছে স্থানটিকে । গঙ্গার বুকে ছড়িয়ে আছে উপলখণ্ড ।
সান বাঁধানো ঘাট দিয়ে নেমে জল স্পর্শ করে মাথায় দিই । হরিদ্বারের মত এখানেও গঙ্গা আরতি , স্তোত্র পাঠ হয় । এই ঘাটে সমস্ত পুজো নানা অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় ।


বাঁধানো চাতালে নানা স্থাপত্য কলার নিদর্শন দেখলাম । মহাভারতের কাহিনী অবলম্বনে অর্জুন শ্রীকৃষ্ণের রথ চালনা , চন্দ্রমৌলির জটা থেকে মুক্ত হয়ে মা গঙ্গার মর্তে অবতরণ , শিব পার্বতী ইত্যাদি দেখতে দেখতে এগিয়ে যাই ।
কাছেই রঘুনাথ মন্দির ।
বিরাট বড় এক বাজার । দুধ , দই , মিষ্টি এখানে বিখ্যাত ।
সেখানেই প্রাচীন ভরত মন্দির । এখানেই তিনি তপস্যা করেছিলেন ।

ঋষিকেশ থেকে তিন কিলোমিটার দূরে লছমন ঝুলা । লোহার দড়িতে ৪৫০ ফুট লম্বা আর ৭০ ফুট উঁচু এই লছমনঝুলা এক আশ্চর্য নির্মাণ ।
এই সেতুর ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নিচের গঙ্গার দিকে তাকালে খরস্রোতা গঙ্গা দেখা যায় । এই ঋষিকেশেই মা গঙ্গা পাহাড় থেকে সমতলে নামে । সেই করুণা ধারায় সিক্ত এই অঞ্চল । চারিদিকে প্রাকৃতিক দৃশ্য অপরূপ ।
সবসময় এখানে পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে ।
লছমনঝুলা পেরিয়ে কৈলাশ আশ্রম দেখা যায় ।
লছমনঝুলার অণুকরনে মুনি কি রেতি ঘাটে ‌আর একটি ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করা হয় । রামচন্দ্রের স্মৃতিতে নামকরণ করা হয় রামঝুলা ।

গীতা ভবন
গীতা ভবনের মধ্যে লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির । মন্দিরের দেওয়ালে রামায়ণ আর মহাভারতের কাহিনী চিত্র মুগ্ধ করবে ।

গীতা ভবন পেরিয়ে পরমার্থ নিকেতন । আচার্য্য শঙ্করাচার্যর প্রতিষ্ঠিত এই মন্দির । ভিতরে বাঁদিকে আর ডানদিকে সারি সারি দেবতার মূর্তি নজর পড়লো ।

এ ছাড়া আছে শিবানন্দ আশ্রম । এখানে একটি চক্ষু হাসপাতাল আছে ।

এরপর আমরা যাই শ্রীশ্রী বালানন্দ মহারাজের আশ্রমে । শান্ত নির্জন পরিবেশ । দোতলায় পরমগুরু মহারাজের মূর্তিতে প্রণাম জানাই । এখানে থাকার ব্যবস্থা আছে ।
আশ্রমটি ঘুরে দেখার পর গাড়িতে আবার রওনা দিই হরিদ্বার ।
এখানে অনেক যোগ ব্যয়াম কেন্দ্র আছে ।
আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরি হয় ঋষিকেশে ।
এখানে থাকার জন্য আশ্রম , ধর্মশালা , হোটেল , টুরিষ্ট লজ অনেক আছে ।
তখন সন্ধ্যা আরতি শুরু হয়েছে । গঙ্গার ঘাট মুখর হয়ে উঠেছে স্তোত্র পাঠে । পিছনে পড়ে থাকে ঋষিকেশ , মহাপ্রস্থানের পথ । সেখানে প্রকৃতির নীরব হাতছানি , হিমালয় পর্বতমালা , গভীর অরণ্য , উচ্ছ্বসিত নদীর কলরব …অপার শান্তির এক অনুভব । যতবার দেখি ততবার ফিরে আসতে মন চায় , যা কিছু জানি মনে হয় কত কি অজানা থেকে গেল । হিমালয় এমন এক রহস্য , এমনই এক বিস্ময় !
” হে মোর চিত্ত , পুণ্য তীর্থে জাগো রে ধীরে
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে । “

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *