ডাউহিলের অভিশপ্ত ঝোরা—- #শ্বেতা_ব্যানার্জী
গল্প —– #ডাউহিলেরঅভিশপ্ত_ঝোরা
লেখিকা —- #শ্বেতা_ব্যানার্জী
আপনি বোদলেয়ারের কবিতা পড়েছেন?
পড়েছি কিছু কিছু,
শেলি, কিটস্, কিম্বা বিনয় মজুমদার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী…..।
হ্যাঁ পড়েছি,তবে অভিজ্ঞ চোখ দিয়ে নয়, যেখানে বিশ্লেষণের মাত্রা ছোঁয়ার ক্ষমতা নেই, সেখানে শুধুই পড়া, নেশার ঝোঁকে।
এইভাবেই কথা শুরু এক চায়ের টেবিলে।
প্রথম আলাপেই বহুযুগ আগে দেখা আমার খুব চেনামুখ মনে হয়েছিল।
একটু ঢোঁক গিলে জিজ্ঞেস করি কোন ইয়ার,
থার্ড, ও, আমি নতুন।
তাইতো আগন্তুক মনে হচ্ছে —–
এইকথা বলে এমন বিশ্রী ভাবে হেসে উঠলো রাগে শরীর রি রি করে জ্বলতে লাগলো।
কি হলো? ছ্যাঁকা লাগলো বুঝি,হাসি আপনি পছন্দ করেননা।
আমি একা থাকা পছন্দ করি,নিজের সঙ্গে নিজেকে নিয়ে সময় কাটানো আমার প্যাশন।
তাহলে এই দুজন এক জায়গায় বসে কথা বলছি,এটা?
মনে হচ্ছে আপনি আমার পূর্ব পরিচিত।
এক দেখাতেই!! আমি লজ্জায় মুখ নামিয়ে নিয়ে বলি…
কিছু সময় হয়না, মনে হয় খুব চেনা মানুষ।
ঠিক আছে মোবাইল নাম্বারটা দিন আর আমারটা
নিন, আমি যেন যন্ত্রচালিত কলের মতন সমস্ত নির্দেশ গুলো মেনে নিয়ে কাজ সমাধান করলাম।
ঠিক আছে আগন্তুক, বাই,বাই…ফোনে কথা হবে।
বাই দ্য ওয়ে…কল করলে ধরবেন প্লিজ। আমি আবারও কলের পুতুলের মতন ঘাড় নাড়ি।
রুমে ফিরে নানান কাজে মাথাচাড়া দেইনি সকালের ঘটনাটা, আমি ব্যস্ত হয়ে পড়ি আমার নিজস্ব কাজের গণ্ডির মধ্যে।
তারপর রোজই চা পানের জন্য ন
কলেজ excursion এ আমরা কয়েকদিন কারপ পৌঁছালাম, হালকা শীতের আমেজ আলোয়ান করে রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছি…
এমন সময় পিছন থেকে —— ডাক, আগন্তুক…।
সেই ডাকে ফিরে দেখি সেই সিনিয়র দাদা,
আমি বলি, আরে! আপনি!
হ্যাঁ, আমি এখানেই থাকি।
আছোতো ক’দিন, কাল এসো….কথা হবে।
যথারিতি তারপর অমোঘ আকর্ষণে আমি ছুটে যাই, তাঁর বলে দেওয়া নির্দিষ্ট পাহাড়ের কোলে যেখানে ঝর্ণা আছে। সাথে নিয়ে যাই বন্ধুদের।
আমি ডাক দি…, আগন্তুক আপনি কোথায়…!!
সাড়া আসেনা, সাড়া না পেয়ে আমরা ফিরবো বলে নিচের দিকে নামতে থাকি হঠাৎ হেঁচকা টানে আমায় টেনে নেয় কেউ—
আমি ভয়ে চিৎকার করে উঠি,আমার মুখে হাতচাপা দিয়ে বুকের কাছে টেনে নেয়,এতটা কাছে যে,তার নিঃশ্বাস আমার নিঃশ্বাসে মেশে….
আর সেই নিঃশ্বাসের শীতলতা আমার মনে কাঁপুনি ধরায়——
আমি কিছু বোঝার আগেই সে ঠোঁট রাখে আমার ঠোঁটে আর গভীর চুম্বনে আমাকে আলিঙ্গন করে।
আমি ঘামতে থাকি,ভাঙতে থাকি, আমার সর্বস্ব
পাথর থেকে নুড়ি হয়ে অনামি ঝোরায় গড়িয়ে পড়ে, আমি সর্বস্বান্ত হই।
বন্ধুরা আমায় খুঁজে না পেয়ে রুমে ফিরে এসে
ডিউটি ম্যানেজার কে সব জানায়, তিনি জায়গার
নাম শুনে আঁতকে উঠেন—-
আমি অনেক রাতে ক্লান্ত, ধস্ত, হয়ে ফিরি, বন্ধুরা
আমাকে দেখে আঁৎকে উঠে মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে থাকে আমি ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে আমার রুমে চলে যাই।
আজ কি জানি কেন! মন সায় দিচ্ছিলোনা…
তবুও কোন এক অমোঘ টানে আমি যথারীতি পৌঁছে গেলাম ঝর্ণার ধারে, আজ বন্ধুদের না জানিয়ে একাই এসেছি।
চিৎকার করে ডাকতে থাকলাম আগন্তুক… আগন্তুক…
আমার ডাক প্রতিশব্দ হয়ে ফিরে আসতে লাগলো..
আমিও বেপরোয়া হয়ে আরও আরও উপরের দিকে উঠতে লাগলাম, চারদিক অন্ধকার, ঝিঁঝিপোকার ডাককে আমি কান্নার সুর ভেবে ভীত হয়ে পরছিলাম।
সারা শরীর দিয়ে এক শিরশিরানি শীতলতা। এক অজানা আশংকা আমাকে গ্রাস করছিল,আমি ক্রমশ স্থবির হয়ে যাচ্ছিলাম…। তবুও মনের জোরে এগিয়ে চলছিলাম…..
……… উপরে আরও উপরে গভীর নিকষ কালো জঙ্গলের মধ্যে আমি চলে এসেছি, খেয়াল নেই কতদূরে আমি চলে এসেছি। কেমন যেন নিশি ডাকা শনশনানি সুর আমাকে টেনে নিয়ে চলেছে…
গভীর অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমি হঠাৎ হোঁচট খাই, অনুমানে বুঝতে পারি এটা একটা কবরস্থান, আমি দরদর করে ঘামতে থাকি।
কোনরকমে উঠে আবার দ্রুততার সঙ্গে আমি হাঁটতে থাকি.. হঠাৎ পেছন থেকে মনে হচ্ছে কেউ আমাকে অনুসরণ করছে। দিব্যি শুনতে পারছি তার পায়ের আওয়াজ, মসমস বুটের শব্দ, ভয়ে ভয়েই পেছনে তাকিয়ে দেখি কেও না। হাঁটছি, আবারও একই ধরনের আওয়াজ। ঝোরাটা কোথায়!! বুঝতে পারছি না।
মনে মনে ঈশ্বরকে স্মরণ করবো সে শক্তিটুকুও নেই।
………..এমন সময় আমার ঠিক ঘাড়ের কাছে একটি আজগুবি শব্দ শুনতে পেলাম। আর সাথে সাথে এক শীতল হিম ধরা হাতের স্পর্শ। আমি চমকে উঠে দৌড়াতে শুরু করলাম। কিন্তু পা আর চলছে না অবশ হয়ে গেছে, ভয়ে ভয়ে যেদিকেই তাকাই অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই নেই, শুধু অদ্ভুত শব্দ তাড়া করে আমাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে….।।
…….এই অরণ্যে ঢুকলেই কেউ হয়তো শুনতে পায় অদ্ভুত সব আওয়াজ, কেউ বনের মধ্যে পথ হারিয়ে আর ফিরে আসে না, আবার কেউ হয়ে পড়ে বদ্ধ উন্মাদ। স্থানীয় অনেকেই মনে করেন, স্থানটিতে নাকি এক অশুভ শক্তির প্রভাব আছে। তার ফলে ঘটেছে একের পর এক রহস্যজনক নিখোঁজ ও মৃত্যুর ঘটনা।
ডাওহিল রোডকে এক কথায় বলা যায় বিউটি অ্যান্ড বিস্ট- এর মেলবন্ধন। ডাও হিল থেকে ফরেস্ট অফিস পর্যন্ত এলাকা জুড়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে এমনই নানা গল্প শোনা যায়—-
১৯৯৯ সালে এলাকাটির রহস্যময়তার প্রথম সূত্রপাত ঘটে বলে অনেকেই মনে করে থাকেন। নাজুমা নামের এক স্থানীয় মিশনারী ছাত্রী এই অরণ্যে ঢুকে উন্মাদ হয়ে যায়,তাকে অ্যাসাইলামে পাঠানো হয়, কিন্তু সেখান থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যাইনি।
এরপর বছরের পর বছর একের পর এক রহস্যময় ঘটনা ঘটতে শুরু করে। এমন কয়েকটি নিখোঁজের ঘটনা, যার রহস্যভেদ করা এখনো কোনো সার্চ টিম বা তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। কীভাবে একের পর এক এসব নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছিল.কেউ আজও জানতে পারেনি…।
….আরও একটা ঘটনা সবাইকে স্তম্ভিত করে এই ঘটানার প্রায় এক বছর পর কলকাতা থেকে আসা একদল পড়ুয়ার সাথে আসে এক ১৮ বছরের যুবত, প্রকৃতির নেশায় সে এই পাহাড়ী জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়ে। তার বন্ধুরা তাকে বনের মধ্য যেতে দেখেছে। কিন্তু তার খোঁজ আর পাইনি।
দীর্ঘদিন পর তার কিছু ছেঁড়া জামা কাপড় পাওয়া যায় খাদের নিচে।
কেন ঘটছে একের পর এক এই অদৃশ্য হওয়ার ঘটনা? অনেক প্যারানরমাল বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে তাদের নানা অভিমত দিয়েছেন । এরপরও এমন কিছু তথ্য এসব অদৃশ্য ঘটনার পেছনে পাওয়া যায়, যেগুলো বেশ রোমাঞ্চকর।
সবগুলো হত্যাকাণ্ড একটি বিশেষ দিনে ঘটছে। মার্চের শেষের দিকে একটা নির্দিষ্ট দিনে, বাকি বছরের অন্য সময় কেন এমন কিছু ঘটেনা তা আজও অজানা।
আজ হসপিটালের বিছানায় নিজেকে দেখে আমি অবাক হই,চিৎকার করতে থাকি আমি এখানে কেন!!! কেন!!! আমার চিৎকারে সিস্টাররা ছুটে আসেন—–
আমায় আশ্বস্ত করে ঘটনাটি বলেন–
আমাকে পাহাড়ি মানুষজন ঝর্ণার পাশ থেকে উদ্ধার করে। রক্তাক্ত অবস্থায়, আমার গাল দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায় আমাকে এখানে ভর্তি করা হয়।
তিন ইউনিট রক্ত দেওয়া হয়েছে, বাঁচার আশা প্রায় ছিলইনা তবুও আমি সুস্থ হয়ে উঠি।
হসপিটালের বেডে শুয়েই তাঁদের মুখেই ওইসব গল্পগুলোও শুনি।
কিন্তু আমার সাথে চায়ের দোকানে যে অপরিচিতর দেখা হয়েছিল, সেইকথা জিজ্ঞেস করলে… কেউই
সদুত্তর দিতে পারেননা।
তাঁরা বলেন, ভূত-ছমছমে কাহিনিতে ঘেরা এই হিলস্টেশনে অনেকেই আসে প্যারানরমাল অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে। ভারতের অন্যতম ভয়ঙ্কর হিলস্টেশনের তকমা পেয়েছে এই শহর। পর্যটকদের কাছে কার্শিয়াং- মানেই এক রহস্যময় অনুভূতি।