#সংসারদর্শন লেখিকা— #শ্বেতা_ব্যানার্জী
#সংসারদর্শন
লেখিকা— #শ্বেতা_ব্যানার্জী
“দে দে পাল তুলে দে….মাঝি হেলা করিস না,
ছেড়ে দে নৌকা আমি যাবো মদিনা”
এই গানের লাইন টি আমাকে স্পর্শ করে খুউব..।
প্রত্যেকেরই একটা নির্দিষ্ট গন্তব্য আছে।
কিন্তু, আমারা সকলেই কী পৌঁছাতে পারি!!অলক্ষ্যে থাকা সূতোর টান কম -বেশী কোনদিকে নিয়ে যায় ভাসিয়ে….
কেউ ভেসে চর পায়,কেউ ভেসেই চলে….
গন্তব্য অজানা।
পরিণতি শূণ্য, তবুও ভাসমান….
সবটাই মাঝির উপর নির্ভরশীল, মাঝি উজানে বাইবে, না ভাটিতেই থাকবে।কেউ ভাসায়,কেউ ভেসে যায়……
সংসার ক্ষেত্র একটা বড় ধর্মস্থান।সেখানেও উপাচার লাগে ষোড়শোপচার।
একটু কমতি তেও হতে পারে দক্ষযজ্ঞ। তাই জীবন মাঝির কাছে আমাদের সর্বদাই নতজানু হতে হয়।
আমাদের গন্তব্যে পৌঁছনোর তাগিদে
দমকা হওয়ায় পাল ঝটপট করে, আবার স্নিগ্ধরুচির বাতাস যখন হাল্কা হাতে চামড় দোলায়…আহা!!
বাতাসের গায়ে হেলান দিয়ে ইহ জগৎ ভুলে..
চোখ বুজিয়ে তার শুদ্ধতা স্পর্শ করতে ইচ্ছা করে।
আবার লালন সাঁই বলেছেন —-
“আপনার আপনি রে মন না জান ঠিকানা ”
সত্যিই তো আমারা আপন মনের ঠিকানার কোনো খোঁজ কী করেছি!
শুধুই ভেকধারী বাউল হলেই তো হবেনা, বাউল হতে গেলে দর্শন জানতে হবে। সংসার ক্ষেত্রেও ভেকধারীর জয়জয়কার ক্ষণস্থায়ী, গভীর অনুভূতি
লালন করে শুদ্ধাচারে সংসার ডিঙি বাইতে হয়।
দেহতত্ত্ব, অর্থাৎ আত্মোপলব্ধি করা,আত্ম দর্শন করে পরমাত্মাকে পাওয়া।
মানুষ হয়ে প্রকৃত মানুষ হওয়া, স্রষ্টার সাথে একাত্ম হয়ে একাতত্মা লাভ, অর্থাৎ ক্রোধ, হিংসা, লোভ, কাম থেকে মুক্ত জীবন যাপন আর তাতেই মোক্ষলাভ, আর এই মোক্ষলাভ যাঁরা করেন তাঁরাই বাউল….।
বাউল দর্শনকে জনপ্রিয় করেন লালন সাঁই।
যিনি নিজেই একটি অধ্যায়, একটি ধর্ম।
যিনি গৃহী না হয়েও গৃহস্বামী।
বাউল একটা দর্শন, সংসার জীবনও সেইরকম একটা দর্শন, একটা সাধন্য,এক সুমিষ্ট ফল,
যাকে যত্নে বড় করে তুললে তার স্বাদ গ্রহণ করা যায়।
ঈশ্বর সহজ -সরল তাই তাঁকেও পেতে গেলেও নিজেকেও চিনতে হয়, হতে হয় শিশুর মতন। চেতনার চৈতন্য হয় জীব আত্মা মিলিত হয় পরম আত্মার। আমরা ঘোর সংসারী হয়ে সংসার সাধনায়, ঈশ্বর সাধনায় দুই সাধনায় একইসঙ্গে ব্রতী।
সদা ভাসমান সচিদ্দানন্দ সংসার সাগরেও বিরাজমান। তা-ই সংসার সাধনায় আমরা ঈশ্বরকে পাই,আপনঘরে খবর নিতে একাত্ম হই ঈশ্বরের কাছে…
আমাদের থেকে আমি হয়ে।
“মাঝি ছাড়া নৌকা কী করে চলে… ”
দিন,-রাত,সকাল -সন্ধ্যা, ঋতু পরিবর্তন, সকলেই তো ফিরে ফিরে আসে, কিন্তু আয়ূ!
তবুও আমরা আশার জগতে আশা নিয়ে বাঁচি।
ঈশ্বর প্রেরিত কিছু বাতাস সুগন্ধ বয়ে আনে–
সেই সুগন্ধি মেখে আমরা নিঃশ্বাস -প্রশ্বাস গ্রহণ করি। ঐশীগুণ সকলের থাকেনা, কারো,কারো থাকে। মোক্ষ কি!!আমি বুঝিনা।
তবুও ধর্ম মানি, কর্ম মানি, ঈশ্বর মানি,
এই তিন মান্যতার দাঁড় বেয়ে আমি আমার ঈশ্বরের পা ছুঁতে চাই….
আমার অঙ্গ সকল শুদ্ধ হো’ক, চোখ, কান, বল, সকল ইন্দ্রিয়গম্য হোক ঈশ্বর চিন্তায়, পরম ব্রহ্ম আমার সত্তা কে গ্রহণ করুক, আমি আমাতে নয়
সকল মানবের শুভ জ্ঞানে সুক্ষ্ম জগৎ, আর বহ্ম জগৎ দ্বারা শান্তির পূর্ণতা গ্রহণ করি।
হে পরমবন্ধু, হে পরমব্রহ্ম, তুমিই পরমায়ূ—
সংসার দর্শনের দর্পণ হয়ে তুমি পথ দেখাও…