।। যাহা বলিব সত্য বলিব ।। কবিতা দে সরকার
।। যাহা বলিব সত্য বলিব ।।
কবিতা দে সরকার
অনেক খড়-ভুসি পুড়িয়ে অবশেষে গো-মাতার সাক্ষাৎকার নেওয়ার অনুমতি পাওয়া গেল। তবে শর্ত একটাই, একজন গো-ভাষা বিশারদ থাকবেন গো-মাতার সঙ্গে। চলো তাই সই! নির্দিষ্ট দিন-ক্ষণ অনুযায়ী প্রশ্ন-টশ্ন নিয়ে হাজির হলাম গো-ভবনে। উষ্ণ আন্তরিক আতিথিয়তায় দুগ্ধজাত আহার্যের সম্ভার মুগ্ধ করল আমাকে! অবশেষে গো-মাতা আর আমি মুখোমুখি। পাশে বোদ্ধা।
আমি—গো-পিতা সম্পর্কে কিছু বলুন…
তিনবার হাম্বা রব শুনে বোদ্ধা হেসে বললেন—মা বলছেন বাবা তো ভোলেবাবার সঙ্গে কৈলাশেই থাকেন! মর্ত্যধামের বাবারা ধর্মের-ষাঁড় খেতাব নিয়ে পথে-ঘাটে ঘুরে বেড়ান। রেগে গেলে তেড়ে-ফুঁড়ে আসেন।
আমি—শুনলাম আপনাদের জন্য বৃদ্ধাশ্রম তৈরি করা হয়েছে। শেষ-বয়সে সুখে-শান্তিতে থাকার জন্য। যদি কিছু বলেন…
করুণ হাম্বা রব শুনে বোদ্ধা চোখের জল মুছে বললেন—মা বলছেন কয়েকটি বৃদ্ধাশ্রম আছে বটে, শুরুতে খাবার-দাবার ভালোই দেওয়া হত। পরের দিকে কী-জানি-কেন খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেল! আমরা পড়লাম আতান্তরে! আশ্রমের ‘কেয়ার-টেকার’একটা বুদ্ধি বের করল। সুযোগ বুঝে আশ্রমের দরজা খুলে দিত মাঝে মাঝে। আমরা দল বেঁধে ফসল-ভরা জমিতে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে আবার আস্তানায় ফিরে আসতাম। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। জমির মালিকরা টের পেয়ে রেগে গেল। জমিতে পাহারাদার নিয়োগ করল আর আমাদেরও কপাল পুড়ল!
আমি—ফসল নষ্ট করলে সবার-ই রাগ হবে গো মা! ছাড়া-গরু দেখলে লোক তো তাড়া করবেই…
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই ল্যাজের ঝাপটা লাগল আমার মুখে! গম্ভীর হাম্বা শুনে বোদ্ধা বললেন—আপনার কথায় মাতা রুষ্ট হয়েছেন। কষ্টও পেয়েছেন। এই মুহূর্তে আপনাকে চলে যেতে বলছেন।
আমি দমে গেলাম। আসল প্রশ্নটা-ই তো এখনো করা হয়নি। আমি যুক্তকরে নতজানু হয়ে বললাম—ক্ষমা করে দিন মা! আমি আপনার সন্তানের মতো। আর একটা মাত্র জিজ্ঞাসা আছে, অনুমতি দিন মা!!
গো-মাতা কান আর ল্যাজ নেড়ে হাম্বা বললেন। বোদ্ধা গদগদ হয়ে বললেন—ইচ্ছে করলেই যে-কেউ মায়ের সন্তান হতে পারে না। তার জন্য চাই প্রশ্নহীন বিশ্বাস আর বিশেষ যোগ্যতা! মা বলেছেন একটার বেশি একটাও প্রশ্ন নয়!
আমি— ভিনদেশি ভাইরাস-কে জব্দ করার জন্য আপনার মূত্র-সেবনের যে উপদেশ-বৃষ্টি হচ্ছে তার সম্পর্কে বিশদে জানতে চাই… আমি একটা শিশি সঙ্গে নিয়ে এসেছি। আপনি বললে আমি আপনার সামনেই গো-মূত্র পান করব এবং শিশি ভরে হিসি নিয়ে যাব।
গো-মাতা নীরব। কান-ল্যাজ স্থির। হঠাৎ আমার হাতটা চেটে দিয়ে আস্তে আস্তে মাথা নেড়ে চলে গেলেন।
ফেরার পথে শিশিটা নর্দমায় ফেলে দিলাম।