লিমিট এক্স টেনড্স্ টু জিরো- ট্রিপল্ এক্স —- দুলাল কাটারী
Limit x.x.x
x—->0
(লিমিট এক্স টেনড্স্ টু জিরো- ট্রিপল্ এক্স)
দুলাল কাটারী
‘একটা কথা বলবো?’
এই মেয়েটিকে আমি অনেক দিন আগে থেকেই চিনি। আমাদের এক ক্লাস নীচেই পড়তো।
ফ্রেন্ড লিস্টে থাকলেও আগে কোনো দিনই কোনো কথা হয়নি।
যথেষ্ট সুদর্শনা’ই বলা যায়;
ডানদিকের গালে থাকা তিলটা মুখখানির সৌন্দর্য যে অনেকটাই বাড়িয়ে দেয় সেটা আগেও কয়েক বার চোখে পড়েছে, আপলোড করা ছবিতে লাইক দিতে গিয়ে।
ইনবক্সের দিকে নজর যাচ্ছে বারবার আর ইতঃস্তত করছি।
আমার আগের প্রেমটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে এবং বুকটা কেঁপে কেঁপে উঠছে।
সে-ও তো এভাবেই শুরু করে ছিলো।
তারপর ভালোবাসা বাসি, দিনরাত্রি চ্যাট,কল, সবই…
তার কাছেই তো তার আগেও যে আমার প্রেম ছিলো; তাকে কতটা ভালোবাসতাম;
তারপর
মা ও মেয়ে মিলে কিভাবে আমাকে দায়সারাভাবে হত্যা করলো; সবই তো বলে ছিলাম।
চাকরি পেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সংসার করতে আমার দেরি হচ্ছিল বলে
তার মা যে আমাকে মা’তুলে গালি দিয়েছিলো, সে কথা তাকেই বলেছিলাম প্রথম।
খুব কেঁদে ছিলাম…
পুরুষের কান্নার উৎসস্থলটা মনে হয় অনেক গভীরে,
যন্ত্রণাটা যেন মোচড় খেতে খেতে আওয়াজের রূপ নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ প্রমাণিত হয়,
তাই নিশ্চুপ চিৎকারের জন্য বুকের ব্যথাটা বেশ কয়েক দিন ছিলো ;
তবে মনটা অনেক হালকা হয়েছিলো,
একজনকে মনের কষ্টগুলো বলতে পেরে।
সেদিন পূব দিকের উঠোনটাতে বৌঠান যে ফুল গাছ গুলো লাগিয়েছিলো তাতে অনেক ফুল ফুটে ছিলো।
প্রতিদিন সকালে সোনালী রোদ এসে ফুল গুলোকে চুমু দিতো খুব করে…
সেদিনই বাদ বাকি পরিযায়ী পাখি গুলো সাইবেরিয়াতেই ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।
অনেক গুলো মাঝি সমুদ্রে যাওয়ার আগেই আবহাওয়ার বিষয়ে সতর্ক হতে শুরু করলো।
প্রথম প্রেমিকাকে হারানোর পর কিভাবে তাকে খুজে বেড়িয়েছি কলকাতার বিভিন্ন বেশ্যাপল্লি থেকে শ্যাওড়াফুলির লটি পল্লি পযর্ন্ত; তা-ও বলেছিলাম তাকেই।
এটাও বলেছিলাম তাদের শরীর কোনো দিন আমাকে খুশি করতে পারে নি। পারেনি আমার পুরুষত্বে কাঠিন্য আনতে।
ও বলেছিলো ‘তুমি খুব ভালো ও সরল। তুমি সব সত্যিই বললে আমায়।’
কিন্তু তার মুখের প্রতিক্রিয়াটি চ্যাটের আড়ালে লুকিয়ে থাকার কারণে সেদিন বুঝতে বড়োই অসুবিধা হয়েছিলো
এবং সেটা প্রমাণিত হলো যেদিন সেও এক তুমুল ঝগড়া চলাকালীন মা’তুলে কথা শোনালো আমাকে।
আমার কান্না যে তার মজার খোরাক জোগায় সেটা বুঝতে পেরে সেদিন থেকেই আমি আর কাঁদিনি।
তবে
হৃদয়ের ক্ষতটা যেহেতু আগের থেকেই ছিলো তাই একটুখানি আঁচড় কেটেই অনেকটা রক্তক্ষরণ করাতে সক্ষম হয়েছিলো সে।
দু’হাতে খুব ভালো করেই রক্ত মেখেছিলো।
রক্তের স্বাদ যে ঈষৎ নোনতা হয়, সে-ই আমাকে প্রথম বলেছিলো।
এবং
সে আরো বলেছিলো রক্তের স্বাদ আস্বাদন করা তার নাকি অনেক গুলো বদ অভ্যেসের মধ্যে অন্যতম।
সেদিন থেকেই গানিতিক ও জ্যামিতিক হারে পৃথিবী থেকে উধাও হতে শুরু করলো অনুভূতি গুলো।
প্রেমিক-প্রেমিকারা আর দলে দলে প্রেম করতে যায় নি কেউই।
সে বছরই প্রথম চিনের উহান প্রদেশ থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিলো।
বেশ কয়েক দিনের মধ্যেই ডিমনার জলে কতগুলো লাশের খোঁজ পাওয়া যায়!
সেদিন থেকেই মনে হয় কোনো আধুনিক নারীর ঘুমপাড়ানি হিসেবে
কবিতার পরিবর্তে পুরুষের আর্তনাদ প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছিলো,
তাই কোনো কবিও মনে হয় এমন কোনো আধুনিক কবিতা লিখতে পারে নি
যা ঘুমের সৃষ্টি করতে পারে আমার চোখে।
কোনো আধুনিক রিলেশনের ক্ষুধাও যেন অতৃপ্তই রইলো।
কোনো আধুনিক সমাজও যেন শান্তির প্রার্থনা ভুলে গেলো।
সেই বছরই চৌধুরী বাড়ির পোষা কুকুরটা আত্মহত্যা করেছিলো
এবং
পর্ণমোচী গাছ গুলো সব পাতা ঝরিয়ে দিয়েছিলো নিমেষে,ঘৃণা ভরা হৃদয়ে।
আর শয়ে শয়ে পরিযায়ী পাখী মৃত্যু বরণ করেছিলো সাঁতরাগাছির ঝিলে,পরিবেশটা এতোটাই দূষিত হয়েছিল!
বোধহয় সেদিন থেকেই রাজনৈতিক নেতারা প্রকাশ্য সভায় অশালীন ভাষার ব্যবহারে মনযোগী হয়ে উঠলো।
বায়ুমন্ডলের ওজোনস্তরে বেশ কিছু গহ্বর সৃষ্টি হলো।
বেশ দুঃখ দুঃখ আকাশটা নিভু নিভু প্রাণে
আমাকে মন খুলে অভিশাপ দিয়েছিলো
‘কেন যে তোর মৃত্যু হয় না!’ এই বলে…
আর আমি
যাকে জীবনের ক্ষতগুলো দেখিয়ে ছিলাম একটু মলিন স্পর্শে সমৃদ্ধ হবো বলে,
সেও কিভাবে আঘাত করতো সেই পুরোনো ক্ষতটাতেই,
দমবন্ধ করা ভাষার আক্রমণে,
সেটা ভেবেই রোজ একবার করে মরতে শুরু করলাম।
তবুও ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা মেয়েদের ব্লক লিস্টে এনে এনে বৃহত্তর থেকে বৃহত্তম করে ফেলেছিলাম ব্লক লিস্টটা।
তাসত্ত্বেও
তার হৃদয়ের থেকে আমার হৃদয়ের দূরত্ব কমলো না একটুখানিও…
যাইহোক,
অনেকক্ষণ ইতঃস্তত করে ইনবক্সে গেলাম এবং ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলাম ‘হ্যাঁ বলো।’
সে সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞেস করলো ‘তুমি এতো চুল দাড়ি রেখেছো, কাটোনি কেন?’
আমি মনে মনে একটা স্বস্তিময় নিশ্বাস ফেলে বললাম
‘ওহ্, এই কথা! আমি ভাবলাম অন্য কিছু বলবে নাকি!’
যাইহোক, আমাকে তো আর কথা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে প্রেমে পড়তে হলো না
বা, মা তুলে গালির মতো নির্মম ও নিষ্ঠুর অপমান সহ্য করতে হলো না।
শুধুমাত্র দাড়ি আর চুল কেন কাটিনি সে হিসেবটা দিলেই হবে।
আবারও নতুন করে প্রেমের মতো একটা জটিল খেলার পাল্লায় পড়তে হবে না…
এবং আমার মা’কেও প্রেমের বাজারে আর বিক্রি হতে হলো না…