নারী কলমে — সোমা কোলে

নারী

কলমে — সোমা কোলে

সেই অনেককাল আগে থেকেই ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে বহু সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে। সেই সময়ের ঘটনার প্রেক্ষাপটকে সাক্ষী রেখে বহু সাহিত্যিক, লেখক আপন আপন সৃষ্টির সম্ভারে সাহিত্যকে সমৃদ্ধশালী করেছেন। তার অনেক উদাহরণ আমরা সাহিত্যের অঙ্গনে পাই। কিন্ত এর বিপরীত দিকটা কখনও চোখে পড়ে নি।

সৃষ্টির সেই শুরুর সময় থেকে নারী এবং তার পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থান নিয়ে বহু সাহিত্য রচনা হয়েছে। পুরাকালের যোধাবাঈ, মীরাবাঈ ,মুমতাজ থেকে শুরু করে ঝাঁসির রানী লক্ষ্মী বাঈ , বেগম রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেন, ভগিনী নিবেদিতা, মাদার টেরেজা এমনকি ইন্দিরা গান্ধীর মতো নারীদের নিয়ে বহু সাহিত্য আমরা পাই যাতে তাদের জীবনের ইতি,উতি বাঁক, বহু চড়াই, উতড়াই পেরিয়ে জীবনের লড়াইয়ের গল্পগুলো জানতে পারি।

পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে নারীরা লড়াই করেই তাদের অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে। আবার কখনও কখনও তার ঠিকানা হয়েছে অন্ধকার চোরা গলি। কাজী নজরুল ইসলামের কথায়……

সাম্যের গান গাই
আমার চক্ষে পুরুষ- রমনী কোনো ভেদাভেদ নাই।
বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যানকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।

আমাদের বর্তমান সমাজ যতই আধুনিকতার মোড়কে চকচক করুক তবুও কোথাও কোথাও পিছিয়ে পড়ার অন্ধকারের কালিমা লুকোনো আছে। ‘নারী স্বাধীনতা’ ‘নারী স্বাধীনতা’ করে আমরা যতই চিৎকার করি না কেন নারীরা আজও পরাধীনতার করাল গ্রাসে নিমজ্জিত। স্বনির্ভর হতে চাইলেও এই সমাজ, এই সংসার তাকে টেনে নিচে নামাতে চেয়েছে। সবথেকে অবাক লাগে সেই কাজে যখন মুখ্য ভূমিকা পালন করে সেই নারীরাই তখন তার থেকে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না।

আজ আমি লেখিকা বাণী বসুর “শ্বেত পাথরের থালা” র আমার ভীষণ প্রিয় চরিত্র বন্দনার কথা বলব। তার জীবনের সংগ্রাম , তার সব শোক কাটিয়ে উঠে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পের সঙ্গে যেন একাত্ম হয়ে যাই। আপাত আধুনিকতার মোড়কে ঢাকা একান্নবর্তী পরিবারের আদরের বৌমা বন্দনা সদ্য স্বামী হারিয়ে শোকে পাথর। তবুও তার শাশুড়ি তার মা হয়ে উঠতে পারেন নি। বরং তাকে দিয়ে নিষ্ঠুর অন্তঃসারশূন্য নিয়মের বেড়াজালে আটকে রাখতে চেয়েছিলেন। সেই বন্দনা গোঁড়ামীর ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে একমাত্র সন্তান কে আঁকড়ে কঠিন বাস্তবের সঙ্গে লড়াই করে এই সমাজের অন্ধ বিশ্বাসের প্রতি জেহাদ ঘোষনা করে জয়ী হয়েছে।
জীবনের চরমতম সুখের দিনেও আবারও লড়াই শুরু হলো। এবার লড়াই নিজের আত্মজ’র সঙ্গে, নিজের ছায়ার সঙ্গে। চরম অভিমানে নিজেকে বৃহত্তর পৃথিবীর কর্ম জগতে নিজেকে নিক্ষেপ করেছে। সব দায়িত্ব পালন করে মাথা উঁচু করে ত্যাগের জয় মুকুট হাসিমুখে পরেছে। তবুও মাথা নত করেনি।

নারীরা বুঝি এমনই হয়। সবকিছুকে কত অনায়াসেই গ্রহন করে। আবহমান কাল থেকেই সেই অস্তিত্বে রক্ষার লড়াই আজও জারি আছে।।

কলমে — সোমা কোলে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *