সাহিত্য বনাম ইতিহাস তপতী মুখার্জী
সাহিত্য বনাম ইতিহাস
তপতী মুখার্জী
ইতিহাস মানুষের অভিজ্ঞতার বস্তুগত দলিল,আর সাহিত্য সেই অভিজ্ঞতার শৈল্পিক প্রকাশ।
কোনো দেশের নিজস্ব ইতিহাস,স্থানীয় আঞ্চলিক ইতিহাস সন্ধান করতে হলে যেতে হবে তার সাহিত্যে -যেখানে রয়েছে তার আদিম শিকড়।
বাংলার নিজস্ব প্রাচীন সাহিত্যের সন্ধান পাওয়া যায় মঙ্গলকাব্যগুলিতে।লোকসাহিত্য সবদেশেই একাধারে সাহিত্য আবার সমাজ বিবরণ।
ঐতিহাসিক কোনো ঘটনা বা স্মৃতি অবলম্বনে বহু বহু কাহিনী উপন্যাস রচিত হয়েছে।বাংলা সাহিত্যেও বঙ্কিমচন্দ্র,রমেশচন্দ্র,হরনাথ শাস্ত্রী,রবীন্দ্রনাথ প্রমুখ থেকে শুরু করে আধুনিক কিছু লেখকও বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন।
ভারতের ঐতিহ্যের ইতিহাস কিভাবে তার প্রাচীন সাহিত্যে বিধৃত হয়ে আছে তা জানা যায় বেদ,পুরাণ,রামায়ণ,মহাভারত থেকে।বলা হয় ‘যা নেই ভারতে,তা নেই ভারতে।’
আদি মধ্যযুগে ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্র হিসাবে দুটি গ্রন্থকে বেছে নেওয়া যায়।বাণভট্যের হর্ষচরিত এবং কলহণের রাজতরঙ্গিনী।এছাড়াও বিক্রমাঙ্কচরিত,পৃথ্বিরাজকাহিনী,পদ্মাবতী এইসব ইতিহাস আশ্রিত রচনার সাহিত্যিক মর্যাদা অপরিসীম।
প্রাচীন ভারতে ঘটনাপঞ্জী রচনার যথেষ্ট প্রবণতা ছিল।এই রকম ঘটনাপঞ্জী থেকেই ইতিহাসের উপাদন সংগৃহীত হতো।
আদিযুগে রচিত পুরাণগুলির মধ্যে বিষ্ণুপুরাণ,বায়ুপুরাণ,মৎসপুরাণ,ভবিষ্যপুরাণ প্রভৃতি থেকে নানা ভৌগোলিক তথ্য জানা যায়।
দাক্ষিনাত্যের তামিল সাহিত্য যা ইতিহাসে ‘সঙ্গম সাহিত্য ‘নামে পরিচিত তা থেকে পুরাতন প্রস্তর যুগের মানুষ,কৃষিকাজ,লোহার ব্যবহারের কথা জানা যায়।
আদি মধ্যযুগে যে সব বিদেশী ভারতে এসেছিলেন তাদের লিখিত বিবরণই ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদন হিসাবে স্থান পেয়েছে।নানা সীমাবদ্ধতা সত্বেও তাদের বিবরণী ভারতের ইতিহাসে অমূল্য তথ্য সরবরাহ করেছে।যেমন হিউয়েন সাঙের বিবরণ।
আরবদের সিন্ধুবিজয় আদিমধ্যযুগের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।বহু আরবীয় পন্ডিত ভারতে আসেন এবং তাদের লিখিত বিবরণ এযুগের এক অমূল্য ঐতিহাসিক দলিল।’চাচনামা’ এমনই এক গ্রন্থ।
আরবীয় পর্যটক সুলেমান এসেছিলেন দেবপালের শাসনকালে আর মহীপালের সময়ে এসেছিলেন অল মাসুদি।
এরকম বিভিন্ন পর্যটকদের রচনাগ্রন্থকে সাহিত্য হিসাবেও যেমন দেখা যায় তেমনই ঐতিহাসিক মূল্যও অপরিসীম।
তাই পরিশেষে বলি সাহিত্যের মূল আর ইতিহাসের শিকড় একই জায়গা থেকে রস আহরণ করে।