শীতকাল তপতী মুখার্জী
শীতকাল
তপতী মুখার্জী
বিভিন্ন কবিতায় সাহিত্যে শীতকাল যেভাবে এসেছে তারই কিছুটা ছুঁয়ে যাওয়া।
বাংলা কবিতায় বর্ষা আবিষ্কারের কৃতিত্ত্ব যেমন রবীন্দ্রনাথের তেমনি শীত আবিষ্কারের কৃতিত্ত্ব কবি জীবনানন্দের।বুকের শীত দিয়ে বাংলা কবিতায় শীত নির্মাণ করেছেন।
“এই সব শীতের রাতে আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে,বাইরে হয়তো শিশির রয়েছে কিংবা পাতা,কিংবা পেঁচার গান,সেও শিশিরের মতো,হলুদ পাতার মতো।
রবীন্দ্রনাথ অবশ্য শীতকে নির্মম সব খোওয়ানোর কাল হিসেবে দেখেছেন।বলেছেন ‘এসেছে শীত গাহিতে গীত বসন্তের ই জয়।’
আবার কোনো কবিতায় চিরায়ত প্রেমের অবারিত উত্স হয়ে এসেছে।যেমন
ডেকেছ আজি,এসেছি সাজি,হে মোর লীলাগুরু
শীতের রাতে তোমার সাথে কী খেলা হবে শুরু।
কবি জসীমউদ্দীন তার কবিতায় বলেছেন
‘ঘুম হতে আজ জেগেই দেখি শিশির ঝরা ঘাসে/সারা রাতের স্বপন আমার মিঠেল রোগে হাসে।’কিংবা
‘সরষে ফুলের পাঁপড়ি নাড়ি ডাকছে মোরে তাই ‘
নজরুলের কবিতায় “পৌষ এলোগো
পৌষ এলো অশ্রু পাথার হিম পারাবার পারায়ে
সে এল আর পাতায় পাতায় হায় বিদায় ব্যথা যায় গো কেঁদে যায়
অস্ত বধূ মলিন চোখে চায় পথ চাওয়া দীপ সন্ধা তারায় হারায়ে”
বৈষ্ণব পদাবলীতে শীত এসেছে রাধার অভিসার অনুষঙ্গে।শীতের প্রবল প্রতিকুলতা উপেক্ষা করে রাধা চলেছে কৃষ্ণের অভিসারে।শীতের দাপটে প্রকৃতি স্তব্ধ,ঘন কুয়াশাকে অতিক্রম করে রাধা কৃষ্ণের অভিসারে শীতের বর্ণনা রয়েছে পদাবলীতে।
আবার মুকুন্দরামের কাব্যে পাওয়া লাইনগুলি হলো
“পউষের প্রবল শীত সুখী যে জন।তুলি পাড়ি আছারি শীতের নিবারণ।ফুল্লরার কত আছে কর্মের বিপাক।মাঘ মাসে কাননে তুলিতে নাহি শাক।”
শীতঋতু ফুল্লরার জীবনে এনেছে চরম দুঃখ।
এমনই সুকান্ত শীতের সূর্যের কাছে প্রার্থনা করেছেন রাস্তার পাশের অসহায় শিশুটিকে সে যেন উত্তাপ দেয়।
অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে,তাই এখানেই ইতি টানলাম।