।।চাষীর কথা।। — অনিমেষ সিংহ

।।চাষীর কথা।।

—অনিমেষ সিংহ

ভারীশিল্প মানব সভ্যতার সর্বাঙ্গীণ বিকাশের সহায়ক নয় বরং মানুষের হতাশার আমদানি করে ভারীশিল্প।
ভারীশিল্পের চরিত্র হল, এলাকার মানুষকে শেকড় থেকে উৎখাত করে যন্ত্রসভ্যতার ভীতকে সুদৃঢ় করা এবং জমির সমস্ত রস নিংড়ে তাকে কারেন্সিতে রূপান্তরিত করা। কৃষি থেকে ভারত যত সরে যাবে ততই তার আভ্যন্তরীণ কাঠামো নড়বড়ে হয়ে যাবে এবং মানবচরিত্র ও আধুনিক গতি পরস্পরের বিরুদ্ধাচারণ করবে, ফলে অশান্তি অসহিষ্ণুতা ও হতাশায় ভুগবে সাধারণ মানুষ। কৃষি হলো ভারতের শিরায় শিরায় প্রবহমান একটি স্বাভাবিক ধারা তার বিরুদ্ধে গিয়ে উন্নয়ণ একটি জোর করে চাপিয়ে দেওয়া বোঝা ছাড়া কিছু না।
আজ কোনো কোনো চাষীর হাতে অর্থ থাকলেও কৃষির প্রতি উৎসাহ নেই। কারণ চটজলদি মুনাফা পাওয়ার রাস্তা কৃষিতে নেই আর দুগুণ/ তিনগুণ লাভও কৃষি থেকে হয় না। তাই সে জমিতে ইটভাটা, ব্রয়লার ফার্ম, শপিং মল, পাম্প,কারখানা,দোকান করতে যতটা আগ্রহী হবে ততোটা চাষে নয়। ভারতের অর্থনীতির কাঠামো নেই কোনো। লাগামছাড়া স্বেচ্ছাচারী অর্থনীতি। এখানে দ্রব্্যের প্রাইস নির্ধারণ করে খুচরা দোকানদার। এবং তাই একশটাকার কাপড় অনায়াসে তিনশ টাকায় বিক্রী হয়। পাঁচ টাকার মাল পনের টাকায় বিক্রী হয়। কাঁচামালের ক্ষেত্রে তো আরো অসহায় চাষী। ফড়ে ও ব্যাবসায়ী লাভজনক অবস্থায় থাকে। এরকমই, -একটা বাস মালিক আসনসংখ্যার পাঁচগুণ যাত্রী বহণ করে। লাগামছাড়া মুনাফা আছে এগুলোতে। সেখানে কৃষি থেকে ঠেঙ্গা ছাড়া কিছু পাওয়া যায় না।
আর একটি নব্য আধা চাকুরীয়া আধা ব্যবসায়ীর জন্ম হয়েছে দেশে। একটা ধারাবাহিক নতুন বিপদ, বহুজাতিক সংস্থার মতো বহুজাতিক চাকুরিয়া। একজন শিক্ষক লটারি ব্যাবসা করছে, কাপড় হোম-ডেলিভারী করছে, মদের দোকানে টাকা লাগাছে, মাছ কারবারে টাকা লাগাচ্ছে, মহাজনী কারবার করছে, বালিখাদানে টাকা খাটাচ্ছে,হ্যাচারী,ভেড়ি সব সবজায়গায় টাকা খাটাচ্ছে এবং বাজারের চরিত্রটা বদলে দিচ্ছে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে উবের ও ওলাতে বউবাচ্চার নামে গাড়ি দিয়েও মুনাফা পাচ্ছে চাকুরিয়া।
কথাটা, হচ্ছে এতে আমার বাপের কী? আসলে যে সাইড বিজনেস কৃষক পরিবারের লোকেরা করত যারা এই দুটোর সামঞ্জস্য রেখে গড়পড়তা একটা মুনাফা লাভ করত, সেখানে ভাগ বসিয়েছে শিক্ষকটা, চাকুরিয়াটা।

আমার এক দাদার সূত্রে পরিচিত হলাম এক ভদ্রলোকের সাথে, যিনি বহুবার জার্মান গেছেন। এবং বৈবাহিক সম্পর্কের জেরে উনি ওখানে গ্রামেও থেকেছেন। উনার মুখে শোনা, ওখানে বীজ দেয় সরকার, জমিতে লাঙন দেয় সরকার। এবং সার ও জল বিশেষ পদ্ধতিতে যন্ত্রের সাহায্যে সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয়। লক্ষণীয় বিষয় হলো, বিঘার পর বিঘা জমিতে সম পরিমাণ ও প্রয়োজনমত সার ও জল দেওয়া হয় এই পদ্ধতিতে। জমির মালিক ও মজুর বাকি সমস্ত কাজ করে। যেমন, রোয়া-পোঁতা,আগাছা পরিস্কার, নালা কাটা। কাটা, ঝাড়াই সরকার করে।

এরকম শুনেছি। শুনে ভালো লাগল। সত্যতা যাচাই করি নি।তার সুযোগও নেই এই মুহূর্তে।

এখানে, আরো বহুবিধ সমস্যা আছে কৃষিতে। তাই চাষজমিকে বাস্তু করে বিক্রি করার প্রবণতা আজ সারা দেশে। যদিও, ভারত তার কৃষিসংকৃতিকে অস্বীকার করে এগোতে পারে না বেশী দূর।

“একটা মদের দোকান হলে রাষ্ট্র, বুক খুলে দাঁড়াবে পাশে।
একটা মদের দোকান রাষ্ট্রকে স্বস্তি দেয়, আমেরিকা এবং ইওরোপ দেয়।
একটা মদের দোকান করব বলে, তিন ফসলি জমিটাকে রেখে এলাম
মাফিয়ার ঘরে -।

শাড়ি খুলে, সে যখন দাঁড়াবে উদম, আমিও যাব, কর্পোরেট মহল্লায়,
শরীরে রাখব, কাম-ক্রোধ-ডেমোক্রেসি।
মদের দোকান হলে আমিও কিনব ফ্লাট, পায়রার নাচমহল,
নীচে স্যুইমিং পুল
সারি সারি বাঁজা তাল ও খেজুরের গাছ ;
তার পাশেই-
দোদুল্যমান একটি, আমলকী বন!!

মদের দোকান হলে, আমাকে ডেকে মঞ্চে বসাবে —
সরকারী,বেসরকারী ও আধা-সরকারী লোকজন।

মদের দোকান হবে বলে, সেই সকাল থেকে বউ গেছে দেবালয়ে;
মদের দোকান হলে সমস্ত শ্রেণির ঈশ্বর, ঠিক আসবেই ঘরে

মদের দোকান হলে চাল আর ডালের অভাব হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *