#রাজতরঙ্গিনীর_উপত্যকা_থেকে দেবযানী সেন
#রাজতরঙ্গিনীর_উপত্যকা_থেকে
দেবযানী সেন
শুধু ডাল আর উলার নয়, বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়েই ছিল শুধু হ্রদ। সংস্কৃত শব্দ ‘কা’ অর্থাৎ জল ও ‘শমিরি’ অর্থাৎ শুষ্ক করা। জল শুকিয়ে যে উপত্যকার সৃষ্টি। হ্রদের উপত্যকায় জন্মিল কাশ্মীর। হিন্দু পুরাণ মতে কাশ্যপ মুনি জলসেচন করে শুষ্ক করেছিলেন তাই তার নামানুসারে কাশ্যপ থেকে কাশ্মীর এর নামকরণ হয়।
মহাভারতেও বর্ণিত আছে, কম্বোজ রাজ্য নামে যা পরবর্তীতে পাঞ্চালরা শাসন করতেন। জম্মু নগরীর গোড়াপত্তন হয়েছিল রাজা জম্বুলোচনের হাত ধরে খ্রীঃ নবম শতকে। প্রস্থর যুগেও মানুষের বসবাস ছিল কাশ্মীরে, বৈদিক যুগে কুরুদের শাসনাধীন ছিল। মৌর্য সম্রাট অশোকের শাসনকালে ও কাশ্মীর মৌর্য সাম্রাজ্যের অংশবিশেষ ছিল।কুষান সম্রাট কনিষ্কের সময়েও খুব গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল। আর এই সময় থেকেই বৌদ্ধ ধর্ম চর্চার মূল কেন্দ্র হয়ে ওঠে কাশ্মীর।©️ দেবযানী সেন
কাশ্মীরের এই অতীত গৌরব হূণ আক্রমণে পর থেকে আস্তে আস্তে হৃত হতে থাকে। এরপর তুর্কি ও পরবর্তীতে মোঘলদের হাতে চলে আসে কাশ্মীর। তখন থেকেই প্রাচীন পরিচিতি আড়ালে চলে যায় আর শাল বয়ন, সূচিশিল্প ও কাঠের কাজ হয়ে ওঠে কাশ্মীরী দের প্রধান জীবিকা।
ঔরঙ্গজেবের শাসনকাল থেকেই মুঘল দের আধিপত্য প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছায়। নাদির শাহের আক্রমণ এই বিপর্যয় কে আরও ত্বরান্বিত করেছিল। প্রথম ইঙ্গ আফগান যুদ্ধে শিখ শক্তি পরাজিত হলেও ইংরেজরা শিখ বাহিনীর অংশ ডোগরা রাজপুতদের সমর্থনে আনে। ১৮৬৪ খ্রীষ্টাব্দে অমৃতসর চুক্তির পর গুলাব সিং জামবালকে প্রিন্সলি স্টেট জম্মু কাশ্মীরের প্রথম মহারাজা ঘোষণা করেন যার পরিবর্তে প্রচুর পরিমাণের অর্থ দিতে হয়েছিল মহারাজা গুলাব সিং কে।
১৯৪৭ এ দেশভাগের সময় গুলাব সিং এর প্রপৌত্র হরি সিং ছিলেন ক্ষমতায়। তৎকালীন নর্থ ওয়েস্ট ফ্রন্টিয়ার প্রভিন্স বর্তমানে খাইবার পাখতুনখোয়া থেকে পাকিস্তানী সেনাদের হামলা রোববার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর সমর্থন ভীষণ ভাবে দরকারি হয়ে পড়েছিল একদা নিরপেক্ষ থাকা কাশ্মীরের মহারাজের পক্ষে। ১৯৪৭ এর ইন্সট্রুমেন্ট ওফ অ্যাসেশন স্বাক্ষর করেন মহারাজা হরি সিং।©️ দেবযানী সেন
স্বাধীন ভারতের জন্ম লগ্ন থেকেই শুরু হয় ভারত পাকিস্তান দ্বন্দ্ব। ১৯৪৮ সালে কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে যায় ভারত। গণভোট এবং পাকিস্তানী সেনা প্রত্যাহারের কথায় সায় দেয় নিরাপত্তা পরিষদ। কিন্তু পাকিস্তান সেনা প্রত্যাহারে অসন্মতি জানায়। ১৯৪৯ সালে হরি সিং কে সড়ে যেতে বাধ্য করা হয়। কাশ্মীরের ক্ষমতা যায় ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা শেখ আব্দুল্লার হাতে। গনভোটে অনড় অবস্থান করে রাষ্ট্রপুঞ্জ ও পাকিস্তান। শেখ আবদুল্লাও গনভোটের পক্ষে থাকায় তাকে ১৯৫৩ সালে বরখাস্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়। জম্মু কাশ্মীরের নতুন সরকার ভারত ভুক্তিতে অনুমোদন দেন।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর পূর্ণ সমর্থন প্রাপ্ত অস্থায়ী সংস্থান অনুচ্ছেদ ৩৭০ এর তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ভারতীয়দের পারমিট নিয়ে কাশ্মীরে প্রবেশের তীব্র প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন তিনি। ১৯৫৩ সালে এই নিয়ম উলঙ্ঘন করে কাশ্মীরে প্রবেশ করতে গিয়ে আব্দুল্লাহ সরকারের হাতে গ্রেপ্তার হন শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায়। বন্দী অবস্থায় রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় তাঁর। কিন্তু এই আন্দোলনের ফলে পারমিট প্রথা লুপ্ত হয় ও ১৯৫৭ খ্রীষ্টাব্দে কাশ্মীর ভারতের অংশ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়।©️ দেবযানী সেন
কাশ্মীর ভারতের সৌর্য, ভারতমাতার মস্তকে শোভা পাওয়া মুকুটের মতো। এর অতীত গৌরব ও সংঘর্ষের ইতিহাস নিয়ে সবসময় ভারতের শোভা বর্ধিত করুক একজন ভারতীয় হিসেবে এই কামনাই করি 🙏🙏🙏।
______*_______*_______*______*______*_____