চিঠি ———— বিবেকানন্দ মণ্ডল

চিঠি

বিবেকানন্দ মণ্ডল

বর্ষা ,
বিষ হজম করতে বলে যেদিন তুমি চলে গেলে
সেদিন , মুহূর্তের পৌরুষ অনুভবে
ভেবেছিলাম তোমাকে ভুলে যাব ।
পৌরুষের সঙ্গে কিছুটা অভিমান‌ও ছিল ।

দু-দিন যেতেই বুঝতে পারলাম —
ঘরের চার দেয়ালের বধিরতা
আমাকে তাপ দিতে শুরু করেছে ।
ছাদে গেলাম
হাওয়ার সান্ত্বনায় শীতল হতে চেয়ে দেখি —
আমার বুকের ধিকি ধিকি অঙ্গারে
নাগারে ফু দিয়ে চলেছে দখিনা বাতাস !

হায়রে পৌরুষ !
হায়রে অভিমান !
প্রেমের প্রতিপক্ষে পৌরুষ ,আর
ফুলধনুর প্রতিপক্ষে হরধনু — দু‌ই-ই সমান ।

তোমাকে ভুলবো বলে
একদিন সুরাপান করেছিলাম — মানে মদ !!
কোন গর্ধব যেন আমাকে বলেছিল —
মদের গ্লাসে সমস্ত দুঃখ পান করে ফেলা যায় !
মদ খেয়ে খুব হেসেছিলাম সেদিন ।
হাসি পাবেনা কেন ?
সেই গর্ধবটার কথা মনে পড়ে খুব হাসি পাচ্ছিল ।
আর
তোমাকে আরো আরো বেশি করে মনে পড়ছিল ।

হেঃ…হেঃ…হে…

তাহলেই বোঝো ,
কত বড় মাপের গাধা ওগুলো যারা বলে কিনা
মদের গ্লাসে ককটেল করে ব্যথা পান করা যায় !!

তুমি যখন আমার হৃৎপিণ্ডটা খুবলে নিয়ে
দূরে… দূরে…
সময়ের অনেক ওধারে চলে যাচ্ছিলে
আর , তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নাড়িগুলোতে ক্রমাগত অসহ্য টান পড়ছিল , তখন ভাবলাম
নাড়িটাই কেটে দিই ।
কারো কাছে হৃদয় ধার নিয়ে
জীবনটা ঠিক চালিয়ে নেবো …

সেই ভেবেই বিয়ে করলাম ।

নতুন আবেশে তোমাকে দু-দিন ভুলতে পেরেছিলাম কিনা কে জানে !
কিন্তু , দিন যেতে যেতে বুঝতে পারলাম —
তোমাকে ভুলবো ভুলবো করে
কখন যেন ভুলেই গেছি ভুলতে হবে তোমায় ; ভুলে গেছি তোমায় ভোলা দরকার , ভোলা উচিৎ !

তাই আজ আর জোর করে
তোমাকে ভোলার চেষ্টা করি না ।

ডুবতে ডুবতে খড়-কুটো আঁকড়ে ধরা তোমার দু-পলের প্রেম , তোমার স্মৃতি , তোমার সম্ভ্রম , চেষ্টাকৃত নির্লিপ্ততা , আর
আমার ঘর-সংসারের বাস্তবতা নিয়ে বেঁচেই আছি ।
আর কয়েকটা বছর এমনি করেই ঠিক কেটে যাবে।
যাকনা সময়
এমন ভাবেই মনের গোপনে মন রেখে …

বর্ষা ,
হ্যাঁ , বর্ষা নামেই প্রথম চিনেছিলাম তোমায় ।
ভালোবেসে মনে মনে এই নামেই ডাকতাম ।
তাই , এ নাম ধরেই বলি —
বর্ষা ,
তুমিও একবার চেষ্টা করে দেখো
সত্যি সত্যি এ মাটির প্রেম
একেবারে ভুলতে পারো নাকি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *