তবুও আমি বুলেট ও বোমার সামনে বুক পেতে দেই –এম মনজুরুল ইসলাম
তবুও আমি বুলেট ও বোমার
সামনে বুক পেতে
দেই
(যে কেউ হিংসাত্মক মনোভাব পরিহার করে কবিতা সম্পর্কে কড়া সমালোচনা করতেই পারেন। কবিতার অনুভূতি যদি অখ্যাত কিংবা বিখ্যাত কোনো কবির কবিতার অনুভূতির সাথে বিন্দু পরিমাণও মিলে যায়, তাহলে সেটা সম্পূর্ণ কাকতালীয়। তথ্যগত কোনো ভুল থাকলে, আমাকে জানানোর জন্য অনুরোধ রইলো।)
এম মনজুরুল ইসলাম
———————————–
আমার এখন মাতৃজরায়ু থেকে বের হবার সময়—-
যারা ধ্বংসের জন্য চুয়াত্তরের মহা দুর্ভিক্ষের
ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, নির্দ্বিধায় খামচি
দিয়ে ছিঁড়ে ফেলতে চায় সত্তুর
মিলিয়ন ক্ষুধার্ত শরীরের
একাংশ- সেইসব
মানুষদের
অধিকার বাঁচাতে আমি আবার
একটি একাত্তরের জন্ম
দেবো…
পরিত্যক্ত রাজপথে একটি ঝাঁঝালো মিছিল দেখার জন্য প্রতিটি নির্যাতিত মানুষের দুর্বল হাতে
তুলে দেবো বিদ্রোহের
স্টেনগান….
অথচ দেখুন, আমার ভেতরে যে কালপুরুষ- সেই
পুরুষকে ওরা টেনে-হিঁচড়ে বিকৃত
ইতিহাসের সামনে দাঁড় করাতে
চায়, শ্বাসরোধে হত্যা
করতে চায়
পরিবর্তিত আমার দ্বাবিংশ
শতাব্দীগুলোকে…..
তবুও আমি বুলেট ও বোমার সামনে বুক পেতে দেই,
শাসিতের পক্ষে বুক উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি
রণাঙ্গনে, জনসভায় দাঁড়িয়ে দেখি
মুমূর্ষু স্বাধীনতার একটি
বীভৎস মৃত্যু….
আমার এখন বিপ্লবী হবার সময়—
জমাট রক্তের ভেতর হাঁটতে-হাঁটতে আমি এখন
অভ্যস্ত! ওরা আমার শুকনো মগজে
ষড়যন্ত্রের খসড়া করে,
ছয়চল্লিশের দাঙ্গায়
নিহত পঞ্চাশ হাজার থেকে এক
লাখ মানুষের লাশ দেখিয়ে
রাজতন্ত্রের ঘোষণা
দেয়….
কিন্তু আমি
বাঙালি, আমি একটি উদগতির জন্য অসাংবিধানিক
গণহত্যায় শামিল হতে জানি, দাসত্বের
প্রতিবাদে রাজনৈতিক তত্ত্বের
বিরুদ্ধে মতবিরোধ
ঘটাতেও জানি….
একদিন আমার মৃতদেহে আগুন জ্বলবে! মর্গের
ফ্রিজে শুয়ে থেকেও শোষিতের পক্ষে
আওয়াজ তুলবে আমার
পুরুষত্ব। আমি
অনুগত দাস হতে নয়- অপরিসীম ক্ষমতাকে
সম্মান জানিয়ে উচ্চারণ করবো
বেঁচে থাকার কম্পিত
শব্দাবলি…..
অপমান হজম করে নয়- সংগ্রাম থেকে
রাষ্ট্রনীতি ভেঙে অনিবার্য সংগ্রামের
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দেখবো
সামাজিক মূল্যবোধ…..
আমার এখন পুরুষত্ব দেখাবার সময়—
ওদের মুখ থেকে বের করে আনবো অর্ধসভ্য
মানুষগুলোর ওপর নির্যাতনের
ইতিকথা, প্রয়োজনে
উষ্ণ রক্তের বুদবুদে ভেজাবো
এই বাংলার শুষ্ক
ভূমি….
আমি মোমবাতি জ্বালিয়ে বসে থাকবো, আমি
আয়ু হাতে নিয়ে বক্তৃতা দেবো শাসিতদের
জনসভায়। আমার এখন প্রস্তুত
হয়ে বের হবার সময়…..
——————————————–
২৫/১০/২০ খ্রি. চককানু, শিবগঞ্জ, বগুড়া,
বাংলাদেশ।