গন্তব্য ———- বানী দেব

গন্তব্য / বানী দেব
—————————-
রূপসা বায়না ধরলো, চলোনা রবিবার মামার বাড়ি যাই। ঝিনুক যোগ দিল তার সাথে – হ্যাঁ মা, চলো না যাই।শেষ মেষ ঠিক হলো কলি আর বাসুদাকেও সংগে নেওয়া হবে। একটা টাটা সুমো ভাড়া করে সেই মতো সকাল ৯টায় ওদের বাড়ি হানা দেওয়া গেল। ঋক আর রূপসা কাল অফিস থেকে দেরি করে ফিরেছে। ফলে আর কি ঘুম থেকে উঠতে লেট। সে যাক্ শেষ পর্যন্ত তৈরি হয়ে রওনা হতে ১১টা বেজে গেল। রাস্তায় যা জ্যাম, সিগনাল এর দাপট, গাড়ি আর এগোয় না। ভাল্লাগে না কলকাতার ধুলো ধোঁয়া আর ভিড়ের কুটকচালি। দক্ষিনেশ্বর পেড়িয়ে বালি, দূর্গাপুর এক্সপ্রেস ওয়ে তে আসতেই মন ভরে গেল। সুন্দর রাস্তা, না কোনো ভিড়,যানজট, সিগনালের চোখ রাঙানি কিচ্ছু নেই। কেবল গতি, প্রচুর সবুজের মাঝখান দিয়ে ছুটে চলা। কলি বলে ওঠে – বাহ্! কি সুন্দর রাস্তা। মাথার উপরে ঝকঝকে আকাশে দাড়িওয়ালা বুড়ো চলেছেন। যেন এক্ষুনি গেয়ে উঠবেন –
” এই আকাশে আমার মুক্তি..”
গাড়ির ভিতর এতক্ষণ সবাই অস্থির হয়ে উঠেছিল, এখন সবার চোখে মুগ্ধতা। ড্রাইভারকেও কত যে কসরত করে স্টিয়ারিং নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছিল তা আর বলার না।এখন তার আর কোনো কাজ নেই। হাত দুটি আলতো স্টিয়ারিং এ রাখা, গাড়ি আপন গতিতে ছুটে চলেছে।চালক চিন্তাহীন, সামনের রাস্তায় দৃষ্টি নিবদ্ধ। সকলে নিঃশব্দ একাগ্রতায় উপভোগ করে চলেছে যাত্রাপথের আনন্দ। হঠাৎ মনে হলো ধ্যান তো এমনই, প্রথমে রাশি রাশি চিন্তার যানজট গোল বাঁধিয়ে দেয়…… একসময় সব থেমে যায়, মন সাক্ষী হয়ে চালকের মতো শুধু দেখতে থাকে। তখন কেবল আনন্দ আর আনন্দ, মনহীন – দেহহীন – বুদ্ধিহীন – অহংকার হীন – শুধু আত্মা – শুদ্ধ আত্মা…. ছোট্ট বিন্দুটির সমুদ্রে লীন হয়ে যাওয়া……

***

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *