স্রোতস্বিনী ——- দেবযানী সেন
স্রোতস্বিনী
দেবযানী সেন(কবিতা কবিতা)
স্রোতস্বিনীর শরীরটা আজ সত্যি ভালো নেই, সকালে অফিসে বেড়োনোর সময় থেকেই অঘটন ঘটেই চলেছে বলতে বলতেই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো।জ্ঞান ফিরলো হসপিটালের বেডে পাশে ঐশিকা বসে।কি হয়েছিল রে ?
ঐশিকা ধমকের সুরে বললো তুই কি নিজের খেয়াল রাখতে পারিস না,আরেকটু হলে তো মিসক্যারেজ হয়ে যেত স্রোত।ঐ নামেই বহুল প্রচলিত।তার মানে আমি মা হতে চলেছি ওয়াও গ্রেট।খুশিতে লাফিয়ে উঠতে চাইলো কিন্তু পায়ে চোট ,ক’দিন রেস্ট নিতেই হবে।ঐশিকা কৌতুহলী হয়ে বললো কি ব্যাপার রে তুই ওয়ান নাইট স্ট্যান্ডের মেয়ে হঠাৎ প্রেগনেন্সি ?ঠিক বুঝতে পারলাম না। তাহলে ডিটেইলসে বলি শোন, তুই তো জানিস মা রেড লাইট এরিয়াতে থাকতো, তার কারণ ছিলাম আমি,আমি একটা অসম্পূর্ণ ভালোবাসার নিদর্শন,সেই বোঝা কেউ বয়ে বেড়াতে চায় নি কিন্তু মা তো মা,আমাকে মেরে ফেলতে পারেনি।একজন ভদ্র লোকের সহায়তায় আমি ব্যারাকপুরের সারদা মিশনে ভর্তি হই। ভালো রেজাল্ট, ভালো চাকরি কোনো কিছুই আমার কাছে বাঁধা হয় নি।কারণ আমার জেদ ছিল, মেধাবী ছিলাম তো,কিছু একটা করে দেখাবোই,মায়ের এই কষ্টকে বিফল হতে দেবো না। কিন্তু বহু বছর পর যখন মায়ের সঙ্গে দেখা হয় তখন অবাক হয়ে যাই দেখে যে মা সেই মানুষটির বাড়িতে নিঃস্বার্থ সেবা করছে যার আমি সন্তান,খুব রাগ হয় মায়ের ওপর, কোলকাতায় চলে আসি, প্রতিজ্ঞা করি যে আমি কোনদিন ভালোবাসবো না কাউকে,পুরুষকে শুধু নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করবো যেমন তারা এতো বছর করে এসেছে।করছিলামও তাই বিন্দাস জীবন যাপন,আজ এ তো কাল ও। কিন্তু মা বলতো ভালোবাসা কখনো বলে আসে না হয়ে যায়।সে আমায় ভালোবাসে কি না তাও জানি না।একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক আমাকে সব বুঝিয়ে দিল।মা হওয়া নাকি জীবনের বড়ো প্রাপ্তি ,আমিও ভীষণ ভীষণ খুশি রে, আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাবি ঐশি।হুম নিয়ে তো যাবো কিন্তু সেই লাকি পার্সন টা কে ?? কি আসে যায় বল, আমি তো আমার শর্তেই জীবন যাপন করছি, সেখানে বাবার পরিচয়টা সত্যি কোনো ম্যাটার করে না। আমার নামের মানে জানিস তো নদী, নদী কখনও থামে না, পথে শুধু বসতি গড়ে চলে বুঝলি… !!!
_*_*_*_*_*