#দুগ্গা ————–শিবানী_বিশ্বাস
#দুগ্গা
#শিবানী_বিশ্বাস
_____________________
আশ্বিনের পঞ্চমীর ভোর রাত
চারখুঁটির প্যান্ডেলে ঠাকুর নিয়ে আসার কথা
দশভূজা মর্ত্যে আসছেন তার ছেলেমেয়ে সহ
অন্ধ ঠানদি দাওয়ায় শুয়ে আছে
ফিসফাস , হাঁটা-চলা , কানে আসে তার
কান পাতে ঢাকের আওয়াজ শোনার চেষ্টায়
দূর থেকে ভেসে আসে বুঝি দুগ্গা আসার আওয়াজ
ঠানদি জিজ্ঞেস করে , “ অয় ,দুগ্গা আইল নাকি ?
দুগ্গা আইল ?”
আঁতুড় ঘরে মেনকা প্রসব যন্ত্রণার ছটফট করে
ঠানদির কানে আসে কাঁসর , উলুধ্বনি , মঙ্গলশঙ্খ ধ্বনি
আকুল স্বরে ঠানদি বলে ,
“ অয় , তোরা কথা কথা কস না ক্যান ?
দুগ্গা আইল নাকি ? “
কান্নার আওয়াজ জানান দেয় সন্তান জন্ম
ঠানদির জবাবে কেউ বলে ওঠে ,
“ দুগ্গা আইসে গো , তোমাগো ঘরে দুগ্গা আইসে”….
ঠানদি জোড়হাত কপালে ঠেকায় আর বিড়বিড় করে….” দুগ্গা আইসে”…
একটা দুইটা বছর কাটে , দুগ্গা বড় হয়
হাঁটুজল ভেঙে , প্রায় সাঁতরে
প্লাস্টিক প্যাকেটে স্লেট -বই নিয়ে
দুগ্গা পাশের গ্রামের স্কুলে যায়
স্লেটে লেখে “অ”
ধীরে ধীরে চিনতে শেখে অ-তে অভাব ,
প্রতিবছর বয়স বাড়ার সাথে জানতে পারে
অ-তে অসুর , অস্ত্র
যাওয়া -আসার পথের অসুরগুলোর জন্য অস্ত্র তুলে রাখে – হাঁসুয়া
মা -বাপ বন্যায় নদীতে নৌকা উল্টে ভেসে গেলে
দুগ্গার দুই হাত দশভূজা হয়ে যায়
অ- তে অন্তহীন অভাবেও অবিচলিতভাবে
জীবনসংগ্রাম চালিয়ে যায়…
এই তো কদিন আগে এই আশ্বিনের ভোরে
জলায় শাক তুলতে গিয়ে
দুইহাত সহ দুগ্গা দশটা অসুরের হাতে পিষে যেতে থাকলে
কোমরে গুঁজে রাখা হাঁসুয়ার কোপে
দুই-তিনটাকে শেষ করে দিলে
কোথা থেকে যেন শঙ্খ বেজে ওঠে , উলুধ্বনি ওঠে
ঠানদি চিৎকার করে , “ দুগ্গা আইলি না কি ?
দুগ্গা আইলি?”
বিধ্বস্ত শরীরটাকে টানতে টানতে ঘরে ফিরে
হাঁসুয়াটাকে ভালো করে মুছে খড়ের চালে গুঁজে দেয়
মনে মনে বলে , অ-তে অস্ত্রে অসুর নিধন
ঠানদির কাছে গিয়ে বলে , “ হ ,দুগ্গা আইসে, দুগ্গা আইসে ”…..