খাঁচার পাখি — বিবেকানন্দ মণ্ডল
খাঁচার পাখি
— বিবেকানন্দ মণ্ডল
একটা পাখি পেয়েছি । কামরাঙা হলুদ রঙের পাখি । ঠোঁটটা শুষ্ক বাদামী রঙের , তাতে একটু ধূসর-কালো রং যেন শুষে নিয়েছে ।
বুকের কাছটা ,
বিকেলের কণেদেখা গোধূলি-লজ্জার মতো লালায়িত । কণ্ঠার কাছে কি করে যেন ছিটে ছিটে আকাশ এসে বর্ণময় !
একটা ছোট্ট সুন্দর খাঁচা এনে দিলাম ।
তবু মনে খুঁত রয়ে গেল — পাখিটা ঠিক মতো গা ঝাড়া দিতেও পারছে না !
আর একটু বড়ো দেখে খাঁচা আনলাম বাজার থেকে ।
তবু কেমন যেন কিন্তু কিন্তু রয়েই গেল —
বেচারা একটু ডানা মেলতে গেলেই খাঁচার দেয়ালে বাড়ি খাচ্ছে !
এরপর চিরিয়াখানার মতো ঘর-সমান একটা খাঁচা বানালাম ।
তাতেও কেন যে মনের স্বস্তি নেই !
পাখিটার জন্য কি করা যায় ? — ভাবতে ভাবতে আমার ভাবনা কখন যেন
আকাশের পরিধি পেয়ে গেল।
খাঁচা খুলে , দিলাম পাখিটাকে উড়িয়ে …
প্রথমে পাশের গাছে ছায়ায় গিয়ে একটু ধাতস্থ হল ।
তারপর সোনালী রোদ ডানায় মেখে দিল উড়ান ।
চেয়ে থাকতে থাকতে শূন্যে মিলিয়ে গেল আমার পাখি …
ঘরে ফিরলাম যখন তখনও মনের মধ্যে কেমন একটা রোদ-ছায়া লেগে আছে । দিবানিদ্রার বিশ্রামেও
পাখিটা আমার আকাশে উড়ছে তখনও ।
আর আমি যেন বিরহী যক্ষপত্নী ,
মেঘদূতের আশায় পথ চেয়ে আছি ।
পরন্ত বিকেলে ছাদে উঠে চেয়ে আছি সেদিন পাখি-উড়ানের পথে —
হঠাৎ চোখে পড়ল
বিকলের তামাটে রোদ মেখে একটা পাখি বড় হতে হতে আমার চোখে খুশির মতো স্পষ্ট হয়ে উঠল ।
মুহূর্ত ব্যবধানে কাঁধে এসে বসে
বুকের খাঁচায় ঢুকল পাখি আমার ।
খাঁচার আগল খুলে দিলেও বুঝি
সব পাখি উড়তে পারে না…!!