#ধর্ম_সঙ্কট — ছবি ব্যানার্জী
#বিভাগ_গল্প
#ধর্ম_সঙ্কট —
ছবি ব্যানার্জী
প্রথম পর্ব–
সেদিন রণজয় বাবু কলেজ ফেরত নার্সিংহোমে এক সহকর্মী কাম বন্ধুকে দেখে মেয়ে রুশার জন্য তার লিস্ট মতো কিছু রেফারেন্স বই আর ছেলে রোহিতের আবদারে শীর্ষেন্দুর কিশোর উপন্যাস সমগ্র কিনতে কিনতে রাত নটা বেজে গেল।
গাড়ি ড্রাইভ করে আসতে আসতে একটা জ্যামের মুখে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই মনে হল পাশের খোলা পার্ক থেকে একটা মেয়ের চিৎকার।আওয়াজ কান পাতলে হাল্কা ভাবে আসছিল।
রণজয় বাবু রাস্তা ক্লিয়ার হতেই না ফিরে ঐ চিৎকার অনুসরণ করে এগিয়ে গেলেন।আওয়াজটা পার্কের শেষ প্রান্তে ঘন গাছ গাছালির কাছে নির্জন জায়গা থেকে আসছিল।হনহন করে এগিয়ে যেতে যেতে দেখলেন তিনটে ছেলে মাথায় টুপি ও মুখে কালো কাপড় বেঁধে একটা মেয়েকে টানা হিঁচড়া করছে।মেয়েটির দুটো হাত তার ওড়না দিয়ে বাঁধা।কাছাকাছি আসতেই শুনলেন একটা ছেলে বলছে–এই শালীর মুখে রুমাল গুঁজে ওর টপটপানিটা আগে বন্ধ কর তো?
রণজয় বাবু একরকম ছুটে এসে বললেন–এই কে তোমরা?মেয়েটিকে ছেড়ে দাও বলছি।
ওদের মধ্যে একটা ছেলে চাপা গলায় বল–স্যার প্রাণে বাঁচতে চান তো চলে যান এখান থেকে।রণজয় ভাবলো– স্যার বলে ডাকল কেন?তবে কি ছেলেটি তার প্রাক্তন কিংবা বর্তমান কোনো ছাত্র?বললেন– আমার কাছে কিছু টাকা,একটা সোনার আংটি,মোবাইল আর ঘড়ি আছে।এগুলো নিয়ে তোমরা দয়া করে মেয়েটিকে ছেড়ে দাও।আলো আঁধারিতে মেয়েটির দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠে দেখলেন আরে!এ তো অপর্ণা? ইউনিভার্সিটির মেধাবী এবং তার প্রিয় ছাত্রী, তার কাছে নিয়মিত সপ্তাহে তিনদিন টিউশন পড়ে।
একটা ছেলে বলল–এই মেয়েটির সংগে আমাদের একটা পারিবারিক হিস্যা আছে।এর মধ্যে ভালো চান তো নাক গলাবেন না।
রণজয় বললেন–কি হিস্যা আছে?–এদের বাড়িটা আমরা কিনব বলে সব ড্রিল ফাইন্যাল হয়ে যাওয়ার পরেও হারামীর বাচ্চা ওর বাপ দাদারা বেশী টাকার লোভে অন্য প্রোমোটারের কাছে টাকা নিয়ে ড্রিল ফাইন্যাল করেছে।
রণজয় বললেন–এতে মেয়েটির কি দোষ?–ও দোষ করেনি তো কি হয়েছে?ওর বাপ দাদা করেছে।এর শোধ আমরা নিয়েই ছাড়ব।রণজয় ধাঁই করে একজনের মুখে একটা ঘুঁষি মেরে ফেলে দিয়ে অন্য একটা ছেলেকে এক লাথি মেরে মাটিতে ফেলে বললেন–জানোয়ারের দল!তোদের সবকটাকে আমিই শায়েস্তা করব। দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা হঠাৎ ছুটে এসে বলল–শালা এতক্ষণ ধরে তোর বহুত লাফরাবাজি শুনছি বলেই মাথায় আচমকা এক লাঠির ঘা।রণজয় মাথায় হাত চেপে চিৎকার করে বাঁচাও বাঁচাও বলে ছিটকে পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল।
তার বিকট চিৎকার পথচলতি কিছু মানুষের কানে গেলে কয়েক জনের ছুটে আসা দেখে ছেলে তিনটে ছুটে পালিয়ে গেল।
ওরা রণজয়ের চোখে মুখে জল দিতেই তার জ্ঞান ফিরে এল।বলল–আপনারা মেয়েটিকে বাঁচান।আমার গাড়ি আছে আমাকে একটু বসতে সাহায্য করলে আমি মেয়েটিকে কাছাকাছি হসপিটালে নিয়ে যেতে পারব।তারা একজন ড্রাইভারকে সংগে নিয়ে ওদের হসপিটালে এডমিট করে দিল।
রণজয় বাবুর মাথায় চারটে স্টিচ দিয়ে পরদিনই ছেড়ে দিল।অপর্ণার খবরটা হু হু করে প্রেস মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়ল।থানা থেকে তদন্ত করার জন্য পুলিশ এল।অপরাধীরা অধরা রইল।ডাক্তার বাবুরা পরীক্ষা করে বললেন–পেসেন্টের শরীরে ধর্ষণের চিহ্ণ নেই।কয়েকদিন রেষ্টে থাকলেই সুস্থ হয়ে যাবে।
দুদিন পর রণজয় বাবু অপর্ণার খোঁজ নিতে তাদের বাড়ি গেলেন।অপর্ণার সংগে দেখা করে বললেন–তুমি দিন সাতেক রেষ্ট নিয়ে কলেজ করো।এটাকে নেহাত দুঃস্বপ্ন মনে করে ভুলে যাও।সামনে তোমার উজ্জ্বল ভবিষ্যত।
অপর্ণার দুই দাদা বলল–আপনি মশাই আপনার কলেজে এসব লেকচার দেবেন।অপু আর কলেজ যাবে না।ওর লেখাপড়া,চাকরির এখানেই ইতি।বাবাকে পইপই করে তখন বলেছিলাম গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে বিয়ে দিয়ে দাও।সেকথা শুনলে আজ এই দিনটা আমাদের দেখতে হত না। ওর আর বিয়ে হবে কিনা সেটাই সন্দেহ।ও সারাজীবন আমাদের কাছেই থাকবে।আজ থেকে ও বাড়ির বাইরে এক পাও বাড়াবে না।
রণজয় বললেন–এসব কি বলছেন আপনারা?ওর এবছর এম এ ফাইন্যাল ইয়ার।ওকে অন্তত নিজের নিজের পায়ে দাঁড়াতে দিন।তাছাড়া ওরা তো অপর্ণার কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। এটা তো ডাক্তারি প্রমাণিত।তাছাড়া একজন সাবালিকা মেয়েকে এভাবে আপনারা জোর করে ঘরে আটকে রাখতে পারেন না।
অপর্ণার বাবা বলল–আপনি হাসালেন মশাই।মেয়ে কি প্রমাণ করার জন্য ঐ সার্টিফিকেটটা ব্যাগে নিয়ে নিয়ে ঘুরবে?যেভাবে মিডিয়াতে এটা প্রচার হয়েছে তাতে আমরাই সমাজে মুখ দেখাতে পারব না।মেয়েদের গায়ে একবার ধর্ষণের ছাপ লাগলে,সেটা সত্যিই হোক বা মিথ্যেই হোক সারাজীবনই তাকে খেসারত দিতে হয়।আর লোকে মিথ্যেটা আগে বিশ্বাস করে।কতজনের মুখ বন্ধ করব আমরা?
রণজয় বললেন–দোষীদের মুখ থেকে যে কথাগুলো আমি শুনেছি তাতে মনে হল ওরা আপনাদের পরিচিত।তাহলে কেন ওদের নামে থানায় এফ আর আই করছেন না কেন?
দুই দাদা তেড়েমেরে এসে বলল–আপনি থামুন স্যার।থানা পুলিশ করে নতুন করে লোকের মুখে মুখে খবরটা রগরগে হয়ে আরো ছড়িয়ে পরুক আর কি?শুনেছি আপনি বিপত্নিক।আপনার হিম্মত থাকলে আপনিই বোনকে বিয়ে করে সমাজে একটা দৃষ্টান্ত করুন তো দেখি?মুখে অমন বড় বড় উপদেশ সবাই দিতে পারে।
–দেখুন দশবছর আগে আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে।আমার ক্লাস ইলেভেনে পড়া এক মেয়ে আর নাইনে পড়া এক ছেলে আছে।বিয়ে করার হলে অনেক আগেই করতে পারতাম–জানতাম স্যার।উপদেশ দেওয়া খুব সোজা।কাজে পরিণত গেলে অজুহাতের অভাব হয় না। আপনি বাড়ি যান স্যার। আমাদের ব্যাপারটা আমাদেরই বুঝতে দিন। রণজয় ঝোঁকের মাথায় বলে দিলেন– অপর্ণার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমি বিয়ে করলে যদি অপর্ণার একটা স্বপ্ন ও পূরণ হয় তাহলে আমি বিয়ে করতে রাজি আছি। অপর্ণা স্যারকে প্রণাম করে বলল–স্যার আমি রাজি।আপনি আমাকে এই বন্দি জীবন থেকে মুক্ত করুন।
রণজয় ঝোঁকের মাথায় অপর্ণাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে বাড়ি ফিরে ধর্ম সঙ্কটে পড়ল।দশবছর আগে মৃতা স্ত্রী মাধুরীর জায়গায় জীবনে আর কাউকে বসাবেন না এটা দ্বিতীয় বার বিয়ে না করার একটা মুখ্য কারণ হলেও তার প্রাণের থেকে প্রিয় দুই ছেলেমেয়েকে অন্য কেউ এসে তাদের অবহেলা করুক এটা ও বিয়ে না করার একটা কারণ ছিল।
অপর্ণার বাবা দাদাদের কাছে বিয়ের জন্য রণজয় সাতদিন সময় নিয়েছিল।বিয়েতে সে যে রাজি হয়ে যাবে সেটা ওরা ভাবতে পারেনি।ওরা তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে বলেছিল–আমরা এই অবস্থায় বিয়েতে অনুষ্ঠান করতে পারব না।তাই বিয়েটা তাদের বাড়িতেই রেজিস্ট্রি করে করার অনুরোধ জানিয়েছিল। দুই দাদা বলল–আমরা ব্যবসায়ি পরিবার।লাভ লোকসানের হিসেবটা ভালোই বুঝি। চিন্তা করবেন না স্যার।আমরা বোনকে গা ভরা গয়না আর মোটা অঙ্কের টাকা খেসারত দিতে রাজি আছি।
রণজয় বললেন–স্টপ ইউ!বিয়ে করতে পারব যখন স্ত্রীর সব রকম দায়িত্ব নিতেও পারব।এক কাপড়ে অপর্ণাকে আমি বিয়ে করব।একটা বাড়তি জিনিস দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।
রুষা আর রোহিত তাদের সদাহাস্যময় বাবাকে কদিন ধরে চিন্তাক্লিষ্ট বিষণ্ণ দেখে একদিন বলল–বাবা হসপিটাল থেকে ফিরে আসার পর থেকেই তোমাকে ভীষণই অন্যমনস্ক দেখছি।তোমার কি এখনো শরীর খারাপ?কিভাবে একসিডেন্ট হল সেটাও আমাদের পরিস্কার করে জানাও নি।
রণজয় তার কিশোরী মেয়ের দিকে মমতাভরা দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বললেন–আমি তোদের না জানিয়ে নিরুপায় হয়ে একটা অন্যায় না কি ভুল জানিনা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি মা।রোহিত বলল–আমাদের বাবা কক্ষনো কোনো অন্যায় সিদ্ধান্ত নিতেই পারেনা।তুমি আমাদের বলো বাবা।
রণজয় ছেলে মেয়েকে আগাগোড়া ঘটনাটা বললেন।রুষা বলল–ও এই ব্যাপার?তুমি সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছো বাবা। তুমি খাঁটি মানবিকতার পরিচয় দিয়েছো।অপুদি তো দারুণ ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট?ওকে তো আমরা চিনি।কি মজা হবে, এবার থেকে অপুদি আমাদের ফ্যামিলি মেম্বার হবে।রণজয়ের বুক থেকে পাষান ভার নেমে গেল।
অপর্ণাকে বিয়ে করে এনে ছেলে মেয়েকে বললেন–তোমরা আজ থেকে অপর্ণাকে আন্টি বলে ডেকো।বাবার বিবাহিতা স্ত্রীকে দিদি বলাটা শোভন নয়।
অপর্ণাকে একান্তে বললেন–অপর্ণা লেখাপড়া শেষ করে চাকরি পাওয়ার পর তুমি স্বাধীন।তুমি চাইলে তোমার উপযুক্ত জীবনসঙ্গী নির্বাচন করলে আমি তোমাকে ডিভোর্স দিতে সব সময় প্রস্তুত জানবে।তোমার লেখাপড়ার প্রস্তুতি,চাকরির প্রস্তুতির জন্য তোমাকে সম্পূর্ণ একটা আলাদা ঘর আমি সাজিয়ে রেখেছি।এই ব্যবস্থায় তুমি কি রাজি?অপর্ণা রণজয়কে প্রণাম করে বলল–আমি খুশি মনে রাজি স্যার।– আর একটা কথা তুমি ইউনিভার্সিটি ছাড়া আমাকে রণজয় বলে ডাকবে।আইনত আমরা স্বামী স্ত্রী।তোমার আমার সামাজিক নিরাপত্তার জন্যই এটা দরকার। এরপর সপ্তাহে ছদিন আমার কাছে টিউশন পড়বে।রান্না করার জন্যে আমাদের দীর্ঘ দিনের মহিলা শৈলদিদি আছে।ও ছেলে মেয়ের জন্য প্রথমে আয়ার কাজে লেগেছিল।মাধুরী মারা যাওয়ার পর ও সংসারের সব দায়িত্ব নিয়েছে।
এইভাবে কেটে গেল দু বছর।অপর্ণা ইংরাজি নিয়ে এম এতে ফার্ষ্টক্লাস পেয়ে চাকরির জন্য নেটে বসল।এই দুবছরের মধ্যে রুষা আর রোহিতের সংগে অপর্ণার বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হল।অবসরে ওরা একসংগে গল্প আড্ডাতে বাড়ি সরগরম করে রাখত।
রবিবার জোর করে শৈলদিদিকে রান্নাঘর থেকে হটিয়ে দিয়ে রুষা রোহিত বলত–পিসি প্রতি রবিবার তোমার ছুটি।রবিবার অপু আন্টি রান্না করবে আর আমরা হেল্প করব।
প্রথম প্রথম মাঝে মাঝেই রোহিত অপর্ণাকে বলত–আচ্ছা অপু আন্টি তুমি তো এখন বাবার বৌ আর আমাদের অপু আন্টি।বর বৌরা তো একঘরেই থাকে।তাহলে তুমি আলাদা ঘরে থাকো কেন?অপর্ণার অপ্রস্তুত মুখ দেখে রুষা ভাইকে ধমক দিয়ে বলত–অপু আন্টিকে অনেক রাত জেগে পড়াশোনা করতে হয়।তাই আলাদা ঘরে থাকে।
রুষা ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় চান্স পেয়ে হোস্টেলে যাওয়ার আগে একদিন অপর্ণাকে তার ঘরে ডেকে বলল–অপু আন্টি আমি জানি তুমি খুব তাড়াতাড়ি কলেজে চাকরি পেয়ে যাবে।আমি এখন অনেক বড় হয়েছি আন্টি।স্বামী স্ত্রীর দাম্পত্য সম্পর্ক ও জানি।তোমাকে আজ একটা অনুরোধ করব?অপর্ণা চুপ করে থাকল।আন্টি তোমার জীবনে যদি অন্য কোনো পুরুষ নাএসে থাকে তাহলে তুমি বাবাকে ছেড়ে যেওনা। আমার বাবার মতো সজ্জন ও সংযমী মানুষ খুব কমই আছে। তোমার দিক থেকে কোনো সারা না পেলে সে নিজে থেকে জোর করে কোনোদিন তোমার ওপর স্ত্রীর অধিকার কায়েম করতে চাইবে না। তুমি কিছু বলবে না অপু আন্টি?
অপর্ণা বলল–না রুষা আমার জীবনে তোমার বাবা ছাড়া অন্য পুরুষ নেই।রুষা পুরুষের কদর্য রূপ আমি দেখছি। আবার তোমার বাবার মতো দেবতুল্য পুরুষ ও দেখলাম।আমি তার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।–আন্টি আমি তোমার মুখে কৃতজ্ঞতার কথা শুনতে চাইনি।তোমার কৃতজ্ঞতা বোধ তো স্বাভাবিক।বাবার প্রতি তোমার অন্য ফিলিংসের কথা আমি জানতে চাইছি।একটা পছন্দের পুরুষের প্রতি নারীর আকর্ষণের কথা জানতে চাইছি।
অপর্ণা বলল–আচ্ছা একটা কথা বলোতো?তোমার বাবার সংগে আমার অন্যরকম সম্পর্ক হলে তোমার আর রোহিতের রাগ হবে না?
–কেন রাগ হবে?আমি ভাই একদিন দুজনেই দু জায়গায় ভবিষ্যতে সেটেলড হব। আমাদের গতিশীল জীবন আমাদের মতোই চলবে। বাবার সংগে যোগাযোগ স্বাভাবিক ভাবেই এমনটা থাকবে না। আর এই বিয়ে তো আমরা খুশি মনে একসেপ্ট করেছিলাম।আমার মা চিরদিন মায়ের জায়গায় থাকবে।কিন্তু তোমার জায়গাটা ও আমাদের জীবনে কম কিছু নয় আন্টি।মানুষ তো অতীত আঁকড়ে বাঁচতে পারে না।–আমি তোমার কথাটা মনে রাখব রুষা।
অপর্ণা নিজে তো অনুভব করে রণজয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা শ্রদ্ধার সংগে ভালোবাসাটাও তার জীবনে কখন যেন ওতপ্রতো ভাবে জড়িয়ে গেছে।কিন্তু ঐ পাষাণ হৃদয়ের মানুষটা তো কখনো এ পর্যন্ত তার প্রতি দুর্বলতা প্রকাশ করেনি।তবে কি তাকেই উপযাচক হয়ে এগিয়ে যেতে হবে?ছিঃ ছিঃ সেটা বড় লজ্জার,বড় অপমানের হবে।
ভগবান বোধহয় একদিন সুযোগ করে দিলেন।রুষা হোস্টেলে চলে গেছে।রোহিত টিউশনে গেছে।বাড়িতে সে আর রণজয়।দিনটা মেঘলা ছিল।হঠাৎ মেঘের গর্জন আর ঘনঘন বিদ্যুতের ঝলকানি।অপর্ণা রণজয়ের ঘরে জানালা বন্ধ করতে গেছিল।সেই সময় বজ্রপাতের মতো মেঘের গর্জন আর তীব্র বিদ্যুতের ঝলকানি।অপর্ণা রণজয়কে ভয়ে জড়িয়ে ধরল।
রণজয়ের খাঁ খাঁ করা মরুভূমির মতো বুকে তখন প্রচন্ড জলপ্রপাতের আছাড় তাকে বিধ্বস্ত করে দিচ্ছে। এক অদ্ভুত ভালোলাগায় দেহ মন অবশ হয়ে যাচ্ছে।তবু ইচ্ছের বিরুদ্ধেই অপর্ণাকে ছাড়াতে গেলে অপর্ণা ফিসফিস করে বলল– ছেড়োনা রণ। আমি তোমাকে আমার সবটুকু দিয়ে ভালোবাসি।আমার দেহ মন প্রাণ তোমাকে নিবেদন করতে চাই।তুমি কি গ্রহণ করবে না?
রণজয় বলল–তোমার কখনো আফসোস হবেনা অপু?–তুমি আমার অনেক জন্মের তপস্যা করে পাওয়া মহাদেব।আমি দাম্পত্য সম্পর্ক চাই রণ।