উত্তরবঙ্গের ২৮০টি দ্রষ্টব্যের সুপারিশকেই মান্যতা দেয়নি রাজ্য হেরিটেজ কমিশন
১৬ই অক্টোবর, কলকাতাঃ প্রায় একদশক আগের রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের কাছে উত্তরবঙ্গের অবিভক্ত জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার এবং দার্জিলিং জেলার ৩০২টি দ্রষ্টব্য স্থানকে হেরিটেজ হিসেবে ঘোষনা করার জন্য উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে হেরিটেজ কমিটির তরফে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের কাছে সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যে ২৮০টি সুপারিশকেই মান্যতা দেয়নি রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের ১৬ জন সদস্যের মধ্যে উত্তরবঙ্গের একজনকেও সদস্য করা হয়নি। বিষয়টি বারংবার রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সভাপতি শুভাপ্রসন্নকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো সদর্থক পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ। অজানা ঐতিহাসিক তথ্য জনমানসে প্রচার করার জন্য নির্বাচিত স্থানগুলিকে হেরিটেজ ঘোষণা করা জরুরি।
২০১১ সালের ২৭ জুলাই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অরুণাভ বসুমজুমদার উত্তরবঙ্গের জেলাভিত্তিক স্থান নির্বাচন করে হেরিটেজ ঘোষণা করার প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। প্রস্তাবটি পাঠানো হয়েছিল হেরিটেজ কমিশনের সদস্য সুগত বসুর কাছে। পরবর্তীতে এ ব্যাপারে হেরিটেজ কমিশন কোনো পদক্ষেপ করেনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যা স্বয়ং কোচবিহার শহরকে হেরিটেজ শহর হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এছাড়া, উত্তর দিনাজপুরের বিন্দল মন্দিরকে, দার্জিলিংয়ে ভগিনী নিবেদিতা যে ভবনে অবস্থান করতেন, সেটিকেই শুধু হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
হেরিটেজের স্থানের সুপারিশের তালিকায় সবচেয়ে বেশি এলাকা রয়েছে দার্জিলিং জেলায়। এই জেলার দার্জিলিং মহকুমায় ৭১টি স্থানকে, কালিম্পং মহকুমায় ১৯টি স্থানকে হেরিটেজ ঘোষণার সুপারিশের পাশাপাশি শিলিগুড়িতে চারটি এবং কার্সিয়াংয়ের ৯টি প্রতিষ্ঠানকে হেরিটেজ হিসাবে ঘোষণা করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলার জলপাইগুড়ি মহকুমায় ৩৭টি, আলিপুরদুয়ার মহকুমায় ২১টি, মালবাজার মহকুমায় ৬টি স্থানকে হেরিটেজের সুপারিশ করা হলেও তার মান্যতা জোটেনি। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট মহকুমায় ৪১টি, গঙ্গারামপুর মহকুমার ১৪টি স্থানকে হেরিটেজের স্বীকৃতির জন্য সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে একমাত্র বিন্দল মন্দির হেরিটেজের স্বীকৃতি পেয়েছে। একইভাবে উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ মহকুমায় ২২টি, ইসলামপুর মহকুমায় ৭টি, কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জের ৮টি, মাথাভাঙ্গায় ২টি, দিনহাটায় ১০টি এবং মেখলিগঞ্জের ৯টি স্থানকে হেরিটেজ তকমা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা সত্ত্বেও তা গ্রহণ করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে হেরিটেজ কমিটির প্রাক্তন কোঅর্ডিনেটর তথা ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন প্রধান ডঃ আনন্দগোপাল ঘোষ বলেন, এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, উত্তরবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলি হেরিটেজ কমিশনের মান্যতা পেল না। রাজ্য হেরিটেজ কমিশনকে বারংবার জানানো হয়েছিল। আশ্বাস দেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। এমনকি রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের ১৬ জন সদস্যের মধ্যে একজন সদস্যও উত্তরবঙ্গের নন।