ভারতীয় সভ্যতার পুরাতাত্ত্বিক তত্ত্ব নিয়ে উঠলো প্রশ্ন
৭ই সেপ্টেম্বর, কলকাতাঃ আর্যেরা বাইরে থেকে এসে এ দেশে সভ্যতা স্থাপন করেছিল, এই প্রচলিত ধারণা নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠে গেল।
মূলত জিনগত গবেষণার মাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, হরপ্পা সভ্যতার শেষ পর্যায়ে (খ্রিস্ট-পূর্ব ২০০০) উপমহাদেশে আর্য তথা বহিরাগতদের কোনও আগমন বা আক্রমণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জিনগত প্রমাণের সঙ্গেই পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনের মাধ্যমে গবেষকেরা দাবি করেছেন, বৈদিক সভ্যতা আসলে হরপ্পা সভ্যতারই ধারা। হরিয়ানার হিসারের কাছে সরস্বতী অববাহিকায় থাকা রাখিগড়হি এলাকায় হরপ্পা সভ্যতার শেষ পর্বের পুরাতাত্ত্বিক নির্দশন ও দু’টি কঙ্কালের সবিস্তার পরীক্ষার ভিত্তিতে গবেষণাপত্র লিখেছেন ডেকান বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ববিদ বসন্ত শিন্দে, বীরবল সাহনি ইনস্টিটিউট অব প্যালিয়োবোটানির গবেষক নীরজ রাই এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডেভিড রাইখ্। প্রথম সারির আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান পত্রিকা ‘সেল’-এ গত কাল ওই গবেষণাপত্রটি প্রকাশ পায়। আজ তা নিয়ে দিল্লিতে মুখ খোলেন বসন্ত-নীরজেরা। যদিও অন্য শিবির বলছে, শুধু একটি প্রত্নস্থলের প্রমাণের ভিত্তিতে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যুক্তিযুক্ত নয়।
যদিও অগ্নিকুণ্ড বা অগ্নিপুজো মানেই হরপ্পা সভ্যতা বৈদিক সভ্যতার অংশ— এ কথা মানতে রাজি নন অনেকেই। বঙ্গবাসী কলেজের পুরা-নৃতত্ত্বের অধ্যাপিকা প্রিয়দর্শনী সেনগুপ্তের মতে, ‘‘প্রাচীন যুগে বহু সভ্যতাই অগ্নির উপাসক ছিল। হরপ্পা সভ্যতায় ধর্ম কী ছিল,
তা জানা যায়নি। তাই বৈদিক সভ্যতার সঙ্গে হিন্দু সভ্যতাকে মিশিয়ে দিয়ে সেটিকে হরপ্পা সভ্যতার সঙ্গে তুলনা করা সত্যের অপলাপ।’’ তাঁর মতে, হরপ্পা বিশেষজ্ঞ হিসেবে শিন্দের খ্যাতি থাকলেও, আগের কোনও গবেষণাপত্রেই তিনি বৈদিক সভ্যতার সঙ্গে হরপ্পার তুলনা করেননি। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে কেন তা করা হচ্ছে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান বর্ষীয়ান অধ্যাপিকা। প্রসঙ্গত, আর্যেরা যে বিদেশ থেকে আসেনি, হিন্দুত্ববাদী শিবিরের অনেকেই এই মতকে সমর্থন করে থাকেন।
নীরজ অবশ্য বলছেন, বর্তমানের ভারতীয়দের জিনে ‘হরপ্পান’ জিনের আধিক্য রয়েছে। বহিরাগত আর্যেরা দেশীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে গেলে মধ্য এশিয়ার জিনের প্রভাব থাকত ভারতীয়দের মধ্যে। কিন্তু তা নেই। খুব সামান্য প্রভাব রয়েছে কুষাণ, শক, হুণ গোষ্ঠীর। রোমিলাদেবীর মতে, এটা ঠিক, নতুন ধাঁচের প্রমাণের ভিত্তিতে ইউরোপের ইতিহাস পাল্টাচ্ছে। তবে নতুন তথ্যের ভিত্তিতে শুরুতেই কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর পরিবর্তে সমস্ত তথ্য ইতিহাসবিদদের সামনে তুলে ধরার পক্ষপাতী তিনি।
ব্রিটিশ পুরাতত্ত্ববিদ মর্টিমার হুইলার প্রথম বলেছিলেন, আর্যেরা বহিরাগত ও তাদের আক্রমণে হরপ্পা সভ্যতা ধ্বংস হয়েছিল। যা খারিজ করে শিন্দে বলছেন, মহেঞ্জোদাড়োর যে কঙ্কাল দেখে হুইলারের এই ধারণা হয়েছিল, পরে প্রমাণ হয়েছে, ওই মানুষগুলির মৃত্যু হয়েছিল বন্যায়। তাই অবিলম্বে ইতিহাস পাল্টানোর পক্ষপাতী শিন্দে। যদিও এই একটি মাত্র প্রমাণের ভিত্তিতে ইতিহাস পাল্টানোতে আপত্তি রোমিলাদেবীর। তাঁর মতে, ‘‘জিনগত যে তথ্য সামনে এসেছে, তা নতুন ধাঁচের প্রমাণ। আগে আলোচনা হয়নি। আগে জিন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে দেখা উচিত, ওই তথ্য কতটা প্রামাণ্য।’’