ঐতিহ্যশালী সেই আর কে স্টুডিয়োতে হবে বিলাসবহুল আবাসন, মল। বিক্রি হয়ে গেল হিন্দি সিনেমার সর্গ
৪ঠা মে, দিনাজপুর ডেইলি ডেস্কঃ তিন দশক আগে চলে গিয়েছেন ‘দ্য গ্রেটেস্ট শোম্যান’ রাজ কাপুর। এ বার ধুলোয় মিশে যেতে চলেছে তাঁর সাধের আর কে স্টুডিয়ো। দীর্ঘ জল্পনা শেষে শুক্রবার স্টুডিয়োটি অধিগ্রহণ করল গোদরেজ গোষ্ঠীর গোদরেজ প্রপার্টিজ লিমিডেট (জিপিএল)। স্টুডিয়োটি ভেঙে সেখানে বিলাসবহুল আবাসন এবং অত্যাধুনিক শপিং মল গড়ে তুলবে তারা।
দু’বছর আগে অগ্নিকাণ্ডে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পর থেকেই স্টুডিয়ো বিক্রি করে দিতে তত্পর হন কপূর পরিবারের সদস্যরা। ছ’-সাত মাস আগে গোদরেজের সঙ্গে তাঁদের চুক্তি হয় বলে জানা গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজ কপূরের বড় ছেলে রণধীর কপূর বলেন, ‘‘চেম্বুরের ওই স্টুডিয়ো আমাদের পরিবারের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েক দশক ধরে সেখানে অনেক কালজয়ী ছবি তৈরি হয়েছে। সেখানে নতুন চিত্রনাট্য লেখার দায়িত্ব গোদরেজের হাতে সঁপে দিয়েছি আমরা।’’
সাফল্যের মধ্যগগনে থাকার সময় নিজের প্রযোজনা সংস্থা আর কে ফিল্মস-এর পত্তন করেন রাজ কপূর। কিন্তু সেই সময় মায়ানগরীতে জাঁকিয়ে বসেছিল নবকেতন ফিল্মস সংস্থা। প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে সেই সময় প্রকাশ্য রাস্তা, মাঠে-ময়দানে শুটিং হত, যা একেবারেই না-পসন্দ ছিল রাজ কপূরের। কিন্তু টাকাপয়সার অভাবে চটজলদি স্টুডিয়ো গড়ে তোলা অসম্ভব ছিল। তাই ‘বরসাত’ ছবির সাফল্য পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাঁকে। ১৯৪৯-এ ‘বরসাত’ সুপারহিট হলে সেই টাকায় স্টুডিয়ো গড়ার পথে পা বাড়ান রাজ।
কিন্তু দক্ষিণ মুম্বাইয়ে স্টুডিয়ো কেনার সামর্থ্য ছিল না রাজ কপূরের। তাই শহর থেকে দূরে, সায়ন ও পানভেলের সংযোগস্থল, দুর্গম চেম্বুরে ২.২ একর জমিতে স্টুডিয়ো তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি। ১৯৫০ সালে প্রধান বিল্ডিংটি মাথা তুলে দাঁড়ায় প্রথম। তার পিছনে নিজের জন্য একটি কটেজও তৈরি করান রাজ কপূর। সেখানেই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সারতেন তিনি। আলাদা ড্রেসিং রুমের ব্যবস্থা করা হয় পরে অভিনেত্রী নার্গিসের জন্য, পরবর্তী কালে যেটি মিউজিয়ামে পরিণত হয়েছিল, যেখানে ‘বরসাত’, ‘আওয়ারা’, ‘আগ’, ‘মেরা নাম জোকার’-এর মতো ছবির পোস্টার সংরক্ষিত ছিল।
ছবির কস্টিউম নিয়ে আজকাল প্রযোজনা সংস্থাগুলির মাথাব্যথা না থাকলেও, কস্টিউম সংরক্ষণে জোর দিয়েছিল আর কে স্টুডিয়ো। এমনকি, ‘প্যায়ার হুয়া ইকরার হুয়া’ গানে রাজ কপূরের হাতে থাকা সেই কালো ছাতাটিও যত্ন করে রাখা ছিল ওই মিউজিয়ামে। শুধু ছবির শুটিং নয়, বরং সেখানে কর্মরত মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে বিভিন্ন ধর্মীয় উত্সব পালনেও জোর দেন রাজ কপূর। তাঁর হাত ধরেই সেখানে গণেশ চতুর্থী, হোলি উত্সব শুরু হয়। আগের মতো জৌলুস না থাকলেও, গত বছর পর্যন্ত তাতে অংশ নিতে দেখা যায় কপূর পরিবারের এই প্রজন্মের সদস্যদের।
১৯৮০ পর্যন্ত বড় পর্দায় নিয়মিত আর কে স্টুডিয়োর দেখা মিলত। এমনকি ‘ববি’ ছবির সেই বিখ্যাত গান ‘হম তুম এক কামরে মে বন্দ হ্যায়’-এর কিছু অংশের শুটিংও হয়েছিল এই আর কে স্টুডিয়োতেই। সতীর্থদের নিয়ে রাজ কপূরের এলাহি পার্টির আয়োজনও হত সেখানেই। কিন্তু রাজ কপূরের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই দুর্দশা শুরু হয় আর কে স্টুডিয়োর। একসময় বিখ্যাত প্রযোজক-পরিচালকদের পছন্দের জায়গা ছিল যে স্টুডিয়ো, সেটিকে সিরিয়াল এবং রিয়্যালিটি শোয়ের জন্য ভাড়া দেওয়া শুরু হয়।
২০০৭ সালে বলিউডে পদার্পণের সময় ঠাকুর্দার আর কে স্টুডিয়োর পুনর্নির্মাণ করতে চান বলে জনিয়েছিলেন রণবীর কপূর। তার পর থেকে উত্সবের সময়ে বাবা-জেঠুদের সঙ্গে আর কে স্টুডিয়োয় দেখা মিলত তাঁরও। কিন্তু ২০১৭-র সেপ্টেম্বরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছারখার হয়ে যায় আর কে স্টুডিয়ো। ‘মেরা নাম জোকার’ ছবিতে রাজ কপূরের সেই মুখোশ, নার্গিসের সাদা-কালো শাড়ি, ‘সরগম’ ছবিতে ঋষি কপূরের বাজানো সেই ডাফলি— সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেই ক্ষয়ক্ষতি থেকে আর কে স্টুডিয়োকে বার করে আনা কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। পরিস্থিতি বুঝে স্টুডিয়োটি বিক্রি করে দেওয়ার সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নেয় কপূর পরিবার। ২০১৮ সালে ঋষি কপূর সেই ঘোষণা করেন। ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে এই মুহূর্তে বিদেশে তিনি। আরকে স্টুডিয়ো বিক্রি হয়ে যাওয়া নিয়ে এখনও পর্যন্ত তাঁর অভিমত জানা যায়নি।