একাধিক বিষয়ে মোদীকে চ্যালেঞ্জ মমতার, ‘এক্সপায়ারি বাবু’ বলে কটাক্ষ
৩রা এপ্রিল, দিনাজপুর ডেইলি ডেস্কঃ একই দিনে নির্বাচনের প্রচারযুদ্ধে নামছেন রাজ্যের যুযুধান দুই কান্ডারী। এই নিয়ে সকাল থেকেই জমজমাট ছিল পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক আঙিনা। এক দিন আগেই নিজেদের ইস্তাহার প্রকাশ করে শাসক এনডিএকে টক্কর দিতে চেয়েছে কংগ্রেস। তাই পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি সারা দেশের নজর আজ ছিল এই রাজ্যের দিকেই। দুপুরে শিলিগুড়ির কাওয়াখালি, বিকেলে ব্রিগেড।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আক্রমণের অভিমুখ ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিকেই। অন্য দিকে নিজের প্রচার শুরুর জন্য দিনের শেষের দিনহাটার প্রচারসভাকেই বেছে নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিলিগুড়ি এবং ব্রিগেড থেকে তোলা সমস্ত অভিযোগের জবাব দিনহাটা থেকেই দিলেন তৃণমূলনেত্রী।
নরেন্দ্র মোদীর ব্রিগেডে বক্তব্য রাখা তখনও শেষ হয়নি। তার মধ্যেই নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী দিনহাটায় বক্তৃতা করতে ওঠেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর শুরুতেই নরেন্দ্র মোদীর মেয়াদ ফুরিয়েছে বলে তোপ দাগেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি এখন মোদীবাবুকে এক্সপায়ারিবাবু বলে ডাকবো।’’
শিলিগুড়ির জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উন্নয়নের রাস্তায় স্পিডব্রেকার বলে কটাক্ষ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তাঁর জবাবে মমতা বলেন, ‘‘উনি বলছেন আমরা উন্নয়ন করিনি। গরিবদের জন্য কাজ করিনি। কৈফিয়ত দিন। আমি তর্কের চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি। উনি গায়ের জোরে মিথ্যা বলছেন।’’ এর পরই উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকার কী কাজ করেছে তা একে একে বলতে শুরু করেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘আমরা সাড়ে সাত বছরে ৯ লক্ষ তফসিলি শংসাপত্র দিয়েছি। এর আগে ৭০ বছরে দেওয়া হয়েছিল মাত্র আড়াই লক্ষ শংসাপত্র। কোচবিহারে ছিটমহলের সমস্যার সমাধান করেছি। জমি নিয়ে জট কাটিয়েছি। ১১০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে ছিটমহলের উন্নয়নের জন্য। পাশাপাশি বলেন, কৃষকদের টাকা, শস্যবিমার টাকা, খাজনা মকুবের টাকা, সবদেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে। পরিবারের লোকের কাছে জমি হস্তান্তর করতে গেলে মিউটেশন ফি-ও তুলে দেওয়া হয়েছে। রাজবংশী, কামতাপুরি সহ অন্যান্য জনজাতির জন্যও আমরা উন্নয়নের নানা প্রকল্প নিয়ে এসেছি।’’
বাংলায় এসে বরাবরই চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে তৃণমূল নেতাদের জড়িয়ে থাকার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন বিজেপি নেতারা। নরেন্দ্র মোদীর এ দিনের দু’টি সভাও তার ব্যতিক্রম ছিল না। মমতার দাবি, ‘‘চিটফান্ডের বিরুদ্ধে আমরাই তদন্ত শুরু করি।’’ অসমের ডেপুটি সিএম সারদাকাণ্ডে কত টাকা নিয়েছেন, এই প্রশ্নও তিনি ছোড়েন মোদীর দিকে।
বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার অভিযান নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তার জবাবে মমতা বলেন, নির্বাচনী প্রচারে ভারতীয় সেনার প্রসঙ্গ আনা যাবে না বলে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সে সবের তোয়াক্কা না করে সেনাবাহিনীর অপমান করছেন নরেন্দ্র মোদী।
বাংলায় নাগরিকপঞ্জি চালু করা নিয়ে বিজেপি নেতারা যে হুঁশিয়ারি দিয়ে চলেছেন, সেই প্রসঙ্গেসরাসরি নরেন্দ্র মোদীকে উদ্দেশ্য করে মমতা বলেন, ‘‘দেশটাকে জবরদস্তি দখল করে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমি বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে প্রস্তুত আছি। আমাকে চমকে- ধমকে কিছু করা যাবে না।’’ অসমে বাঙালিদের দেশ থেকে বের করে দিতে চাইছে বিজেপি, এই অভিযোগও করেন মমতা। বাংলাতে কোনও ভাবে এনআরসি বা নাগরিকপঞ্জি চালু করা যাবে না, এই চ্যালেঞ্জ তিনি ছোড়েন খোদ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে। হুঁশিয়ারি দেন, ‘টাচ মি ইফ ইউ ক্যান, ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান’।
বিজেপির বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে ভোট কেনার অভিযোগও তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাধারণ মানুষ যাতে টাকার লোভে বিজেপিকে ভোট না দেন, তা দেখতেওসমর্থকদের সতর্ক করে দেন তিনি। রাজ্যে ৪২টির মধ্যে ৪২টি আসনই তৃণমূল জিতবে বলেও নিজের বক্তব্যের শেষে দাবি করেন তিনি। বলেন, ‘‘জোড়াফুলে ভোট দিন, দিল্লিকে বদলে দিন… জোড়াফুলে ভোট দিন, মোদীকে সরিয়ে দিন।’’ একই সঙ্গে গেরুয়া শিবিরকে তাঁর পরামর্শ, ‘‘আগে দিল্লি সামলা, তার পর দেখিস বাংলা।’’