বাংলার প্রথম ছাপাখানা শ্রীরামপুর নয়, কেরী সাহেব তার জন্মদেন বর্তমান মালদা জেলার মদনাবতির নিলকুঠিতে
২৪শে ফেব্রয়ারী, রূপক দত্তঃ বাংলার প্রথম ছাপাখানা কোথায় ও কবে, কি ছাপা হয়েছিল প্রথম সেই ছাপাখানায়, এই সব নিয়ে যে উত্তর বেড়িয়ে আসে তা হলো শ্রীরামপুর, ১৮ই মার্চ ১৮০০ খ্রীষ্টাব্ধে বাইবেলের বঙ্গানুবাদের প্রথম পাতা ছাপা হয়, কিন্তু এই সব উত্তরের ভেতরে চাপা পরে আছে তৎকালিন দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত বর্তমান মালদা জেলার মদনাবতির নিলকুঠি।
জন টমাস সাহেব মদনাবতি ও কুশমন্ডির মহিপালে দুইটি নিলকুঠি ইষ্ঠ ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে নিয়ে, ১৭৯৩ সালে মদনাবতি নিলকুঠির দ্বায়িত্বভার অর্পণ করা হয় স্যার উইলিয়ামকে, ইংল্যান্ড থেকে তিনি তার পরিবারকে নিয়ে টাঙ্গন নদীর পারে অবস্থিত এই নিলকুঠির দ্বায়িত্বভার গ্রহন করেন। তার স্ত্রী সেই সময় অন্তসত্তা হওয়ায়, এইখানে আসতে তিনি প্রথমে রাজি হননি। পরে তিনি রাজি হলে নিলকুঠির দ্বায়িত্বভার গ্রহন করেন। দ্বায়িত্ব নেবার পরে, তার হাত ধরেই শুরু হয় এই এলাকার প্রথম নারি শিক্ষা থেকে শিশু শিক্ষার নতুন নতুন জাগরন। তিনি এইখানে থেকেই বংশীহারীর কয়েকজন কারিগর নিয়ে শুরু করেন ছাপাখানা ও শব্দের ব্লক তৈরির কাজ।
জানাযায় তিনি ১১ই নভেম্বর ১৭৯৩ সালে ইংলান্ড থেকে কলকাতা আসেন এবং এরপরে তিনি মদনাবতির নিলকুঠির দ্বায়িত্ব নিয়ে কাজ শুরু করেন। তখন নিলকুঠি মানে এই এলাকার চাষিদের ধারনা ছিলো ত্রাস ও মৃত্যুর জ্বালা ভূমি। যা পরিবর্তন করেছিলেন স্যার উলিয়াম কেরী। কিন্তু এই সুবর্ণ দিন আর বেশী দিন স্থায়ী হয়নি এই এলাকায়। তার ছিলো পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে, কিন্তু শৈশবেই মারা যান তার দুই মেয়ে, এরপরে ১১ই সেপ্টেম্বর ১৭৯৬ সালে উলিয়াম সন্তান পিটার কেরী কলেরায় আক্রান্ত হয়ে এই মদনাবতিতেই মারা যান। তখন পিটারের বয়স ছিলো ৫ বছর।
ফলে এই মদনাবতিতে তিনি শুরু করেছিলেন বাইবেলের বঙ্গানুবাদের কাজ, যা তার তৈরি ছাপা যন্ত্রে ছাপার কাজ শুরু করেছিলেন। এই দুর্ঘটনা প্রচন্ড ভাবে ভেঙে ফেলেছিলো কেরী দম্পতিকে, ফলে তিনি তখন প্রথমে মদনাবতি ছেড়ে টাঙ্গন নদীর পারে অবস্থিত বংশীহারীর খিদিরপুরে চলে আসেন, এবং ১০ই জানুয়ারী ১৮০০ সালে তিনি শ্রীরামপুর স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন। আর এরপর কেরী সাহেবের বাংলা সাহিত্যের জাগরনের নানা কীর্তি থেকে হারিয়ে যায় দিনাজপুর ও মদনাবতির নাম। আজও এই মদনাবতিতেয় এই এলাকার মানুষরা সযত্নে রেখেছেন তার ছেলের শেষ স্মৃতি, পিটার কেরীর সমাধি। তিনি শ্রীরামপুরে গিয়েই শেষ করেন বাইবেলের বঙ্গানুবাদ, রামায়ন ও মহাভারতের ইংরেজি অনুবাদ থেকে ভারতীয় শিক্ষা জগতের নানা বৈপ্লবিক সৃষ্টি। পরে তার হাত ধরেই তৈরি হয়েছিল শ্রীরামপুর কলেজ ও শ্রীরামপুর ইউনিভার্সিটি। তাই আজও স্যার উইলিয়াম কেরী ভারতীয় শিক্ষাজগতের এক অনন্য ব্যক্তিত্ব।