ভারতের অনেক অজানা কথা মাটির নিচে চাপা পরে আজও বহন করে চলেছে দক্ষিন দিনাজপুরের বাণগড়
১৬ই ফেব্রয়ারী, কৃষ্ণপদ মন্ডলঃ গঙ্গারামপুর চৌরঙ্গী মোড় থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার উত্তরদিকে হামজাপুর রাস্তায় গেলে পাওয়া যাবে বিখ্যাত প্রাচীন প্রত্নক্ষেত্র বাণগড়। পশ্চিমে পুনর্ভবা নদী এবং বাকি তিনদিকে পরিখা দ্বারা ঘেরা উঁচু বিশাল এলাকা নিয়ে বাণগড় অবস্থিত। দক্ষিন-পূ্র্ব দিকে এই উচু জায়গার উপরেই রয়েছে ভারতের প্রাচীন নগর সভ্যতা বাণগড়। প্রায় কয়েক হাজার পুরাতন এই সভ্যতা যে কত উন্নত ছিলো তা এই বাণগড়ের খনন কাজে লক্ষ্য করে ইতিহাসবিদরা। গেলে লক্ষ করা যাবে এই এলাকার চারদিকে ৮ থেকে ১০ ফুট চওড়া পাতলা ইটের প্রাচীর, আর এই প্রাচীর ঘিরে রয়েছে বড় ব্যাসের গোলাকার ওয়াচ টাওয়ার। উঁচু ঢিপি সহ সমস্ত জায়গায় রয়েছে অসংখ্য প্রাচীন ইট ও খোলার টুকরো এবং গাথুনিযুক্ত অট্টালিকার নিদর্শন; পশ্চিমাংশে রয়েছে চওড়া দেওয়ালযুক্ত সুলতানি যুগের অনেকগুলি ঘর। জায়গাটি দেখলেই মনে হবে এখানে যেন লুকিয়ে রয়েছে নানা ইতিহাস।
১৯৩৮-৪১ সালে প্রখ্যাত প্রশ্নতাত্ত্বিক কুঞ্জ গোবিন্দ গোষ্বামী মহাশয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধীন প্রথম এই জায়গার কিছু অংশ খনন কার্য চালান। তাতে অতীতের নানা সামগ্রী বেড়িয়ে আসে, যা থেকে সকলকে চমকে দেয় বাণগড়ের প্রাচীন উন্নত নগর সভ্যতার নিদর্শন। খনন কার্যের ভিত্তিতে উঠে আসে পাঁচটি স্তরে পাঁচটি যুগের নিদর্শন। যেখানে মেলে মৌর্য যুগ, শঙ্গযুগ, গুপ্তযুগ, পালযুগ ও ইসলামি যুগের অনেক ইতিহাস। আবার ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত আবার শুরু হয় বাণগড়ের খননকার্য। ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের অধিন শ্রী তপন জ্যোতি বৈদ্য মহাশয়ের নেতৃত্বে খনন কার্য চলতে থাকে। পাওয়া যায় প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী। তিনি আটটি স্তর অনুযায়ী যুগের কথা বলেন, যার মধ্যে যুক্ত হয় আরো তিনটি যুগের নিদর্শন, যা হলো প্রাক মৌর্য যুগ, মৌর্য যুগ, শঙ্গযুগ, গুপ্তযুগ, পালযুগ, সেনযুগ ও ইসলামি যুগের ইতিহাস। তবে এখনো অনেক অনেক এলাকার খনন কার্য বাকি রেখেই, মাটি চাপা দিয়ে দেয় ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ। বলা হয় যা উৎঘাটিত হলে বেড়িয়ে আসতে পারে এই প্রাচীন ভারতবর্ষের বহু অজানা কথা।
জনশ্রুতি আছে বাণগড় ছিলো বাণরাজার রাজধানী, পৌরাণিক কথা অনুযায়ী যেখান থেকে রাজা বাণ বাংলা বিহারের একটা বড় অংশে শাসন করতো। তবে ২০০৯ সালে ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের খনন কার্যে মাটির নিচে মেলে সুবিশাল এক প্রাচীন জৈন মন্দির।
এছাড়াও বহু প্রাচীন গ্রন্থ থেকে পাওয়া তথ্য অনুয়াযী এটা প্রামানিত সত্য যে এই এলাকা এক সময় জৈন ও পরে বুদ্ধ ধর্মাবলম্বি মানুষদের বসবাস ছিলো, যার কারনে এই এলাকায় অবস্থিত ছিলো দেবকোট মহাবিহার। তৎকালিন কোটিবর্ষ সভ্যতা যে কত উন্নত ও উচ্চ মানের ছিলো তা রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায় ও সন্ধ্যাকর নন্দীর লেখাতে প্রামানিত।